‘এইচআরডব্লিউর বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক’

যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রশ্ন তোলার প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা মূলত এদেশের বিচার বিভাগের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2013, 05:11 PM
Updated : 16 August 2013, 05:58 PM

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শুক্রবার এক বিবৃতিতে গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়ায় ‘ত্রুটি’ ও ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ তোলে।

এর প্রতিক্রিয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জেড আই খান পান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “এই বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।এটা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে এবং সাম্রাজ্যবাদের পক্ষের কথা।”

 আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আর কোথায় আসামিদের এতো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে? কোথাও না। নুরেমাবার্গ থেকে রুয়ান্ডা- কোথাও এতো সুবিধা দেয়া হয়নি।

“আমাদের এখানে আসামিকে সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেখানে ওই আসামির আইনজীবী ছিল। দুনিয়ার কোথায় যুদ্ধাপরাধের আসামিকে এভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?”

এদেশের বিচার বিভাগের ওপর মানুষের অনাস্থা আনতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব ভুয়া অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেড আই খান পান্না বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে এক জঘন্য মানুষ হচ্ছেন গোলাম আযম। একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে জাতিগতভাবে নির্মূলের জন্য তিনি নেমেছিলেন। সেই গোলাম আযমকে দণ্ড দেয়ার পরও একটি হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে।

“দুনিয়ার কোথায় আসামি এই সুবিধা পেয়েছে?”

“তাহলে কী এই আসামিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেই বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হতো?”,  প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জেড আই খান বলেন, “গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি বলে অভিযোগ করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা আজ কেন এ কথা বলছে? তারা তো একটি মানবাধিকার সংগঠন। একাত্তর‌ সালে যাদের মানবাধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে তাদের প্রতিও এদের দায়িত্ব রয়েছে। তাহলে তারা আগে এসে কেন প্রমাণাদি সংগ্রহে সহযোগিতা করলো না? পৃথিবীর অন্যতম বড় একটা যুদ্ধাপরাধ এখানে হয়েছে সেটা কি তারা জানে না?”

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারই একমাত্র মানবাধিকার ইস্যু নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “২০০৫ সালে যখন জঙ্গিরা দেশব্যাপী বোমা হামলা করেছে তখন তো তাদের এ রকম উদ্বেগ দেখি নাই। ঝালকাঠিতে বিচারককে হত্যা করা হলো, সিলেটে আদালতে হামলা হলো, তখন তারা কোথায় ছিলো? আর এখন এসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছেন কেনো? ”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে মানবাধিকারকর্মী পান্না বলেন, তারা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের সোল এজেন্ট না। তারা কিছু ভালো কাজ করলেও মাঝে মাঝে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করে।

“তারা আমাদের নিয়ে কথা বলে। কিন্তু গুয়ানতামো বে নিয়ে তো কোনো কথা বলে না? আপনারা সেটা আগে বন্ধ করে আসেন। তারপর আমাদের নিয়ে কথা বলবেন। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর, ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করেন। মানবাধিকার কেবল মুষ্টিমেয় কিছু লোকের না। এটা সবার।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সাম্রাজ্যবাদের হয়ে কাজ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সেই সাম্রাজ্যবাদই লাদেনকে সৃষ্টি করেছে। আবার তারা তাকে বিনা বিচারে মেরেও ফেলেছে। আমরা লাদেনকে সৃষ্টি করি নাই, আবার কাউকে বিনা বিচারে মারার পক্ষেও নই। আইকম্যানকে তারা কী বলেছিল? তাকে তো কিডন্যাপ করে এনে বিচার করা হয়েছে। সেগুলোতে মানবাধিকার লংঘন হয় না। কিন্তু আমাদেরটা হয়।”

“আমরা ক্ষুদ্র দেশ বলে তাদের চোখে আমাদের অনেক দোষ ধরা পড়েছে।”