আনসারুল্লাহর ‘তালিকায়’ মন্ত্রীসহ ১২ জনের নাম

উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর কার্যালয় থেকে পুলিশ ১২ জনের ছবিসহ একটি তালিকা উদ্ধার করেছে, যাদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2013, 08:03 AM
Updated : 28 Jan 2014, 11:38 AM

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার রাজধানীর বছিলা মসজিদ সংলগ্ন মুফতি জসীমের কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বেশকিছু বই এবং অর্ধ শতাধিক সিডি উদ্ধার করে।

এর আগে সোমবার দুপুরে বরগুনার দক্ষিণ খাজুরতলা এলাকায় গোপন বৈঠক করার সময় আনসারুল্লাহর প্রধান মুফতি জসীমসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জসীমের অফিসে তারা ১২ জনের ছবিসহ একটি তালিকা পেয়েছেন, যাতে গত ফেব্রুয়ারিতে নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার এবং হত্যাচেষ্টার শিকার ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনও রয়েছেন।

মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই তালিকায় দুজন মন্ত্রীসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামও রয়েছে। তাদেরও হত্যার পরিকল্পনা ছিল কি না জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা তা জানার চেষ্টা করছি।”

ব্লগার রাজীব হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই জসীমের নাম বলেছে বলেও যুগ্ম কমিশনার জানান।

তবে তালিকায় থাকা বাকি দশজনের নাম তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দারকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, যিনি ইন্টারনেটে লেখালেখির মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের মুখোশ উন্মোচনে সক্রিয় ছিলেন।

ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী গত মার্চে আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতেও হত্যার প্ররোচনাদাতা হিসাবে মুফতি জসীমের নাম উঠে আসে।

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় হামলারি শিকার হন আরেক ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিন। ছুরিকাঘাতের গুরুতর জখম নিয়ে বেশ কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

বরগুনার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী একজন উগ্রপন্থী নেতা।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার পল্লবী ও উত্তরা থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পল্লবী থানার মামলায় তিনি ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি। উত্তরা থানার মারামারির মামলায় আসামি তিনি।”

মঙ্গলবার দুপুরে মুফতি জসীমকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে চায় পুলিশ। আদালত ২১ অগাস্ট শুনানির দিন রেখে তাকে জেল হাজতে পাঠায়।

বরগুনার পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃত বাকি ৩০ জন মুফতি জসীমের অনুসারী। তাদের সবার বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি মামলাও করা হয়েছে।

তবে মঙ্গলবার ঢাকার বছিলায় মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশে জসীমের টিনশেডে অফিসে তল্লাশির সময় সেখানে কাউকে পায়নি পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা আগেই সটকে পড়ে বলে পুলিশের ধারণা।

বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামের নূর হাওলাদারের ছেলে জসীম ভারতের দেওবন্দে পড়াশোনা করেন এবং পরে হায়দরাবাদের সাবেলুস সালাম মাদ্রাসা থেকে মুফতি (ফিকা শাস্ত্রে) পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকার জামেয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ও বরিশালের মাহমুদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং ২০০৪ সালে বরগুনা কেন্দ্রীয় সদরঘাট জামে মসজিদে প্রধান খতিব হিসেবেও চাকরি করেন। পরে সৌদি আরবের মদিনায় লিসানস বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

সেখান থেকে দেশে ফিরে প্রথমে ধানমন্ডির হাতেমবাগ মসজিদের খতিব ছিলেন। এরপর তিনি মোহাম্মদপুরের বছিলায় মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও  মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানও চালান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, ওই মাদ্রাসা ও মসজিদ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই উগ্র মতবাদ প্রচার করে তরুণদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন জসীম। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখছেন।