ফেলানী হত্যার বিচার শুরু: নির্দোষ- দাবি বিএসএফ সদস্যের

বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2013, 03:33 PM
Updated : 13 August 2013, 04:06 PM

আড়াই বছর পর মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি বিশেষ আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা বিএসএফের এটাই বিচারের প্রথম উদ্যোগ।

ফেলানীর বিচার শুরুতে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর আশা প্রকাশ করেছেন, এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না।

১৩ অগাস্ট শুরু হওয়া এই বিচার ২২ অগাস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে জানিয়েছে।

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই বিচারকরা আসামি অমিয় ঘোষের কাছে জানতে চান, তিনি দোষ স্বীকার করছেন কি না? তখন বিএসএফের এই সদস্য বলেন, তিনি নির্দোষ।

ফেলানীকে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর থেকে কনস্টেবল অমিয় ঘোষ বিশেষ হেফাজতে রয়েছেন,  তিনি শুধু তার ইউনিট-১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমিতভাবে চলাফেরা করতে পারেন৻

অমিয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন) এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।  

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৫ বছর বয়সী ফেলানী। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি প্রকাশ হলে তখন ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে বিএসএফ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বান এবং ঢাকার পক্ষ থেকে বারবার তাগিদের পর ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নেয় বিএসএফ।   

কোচবিহারে বিএসএফের ১৮১ নম্বর চৌকিতে এই আদালতের কার্যক্রম চলছে। বাহিনীর গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে পাঁচ বিএসএফ কর্মকর্তা আদালত পরিচালনা করছেন।

জেনারেল সিকিওরিটি ফোর্সেস কোর্ট বা জি এস এফ সি নামের এই বিচারব্যবস্থা সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের সমতুল্য৻

বিএসএফের নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলা এই বিচারে ভারতের দণ্ডবিধিতে যা শাস্তির বিধান আছে;  তার চেয়েও বেশি শাস্তি দেয়ার সুযোগ এতে রয়েছে।

এই মামলায় সাক্ষী রয়েছেন ফেলানীর বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু এবং নিহত কিশোরীর মামা আব্দুল হানিফ।

দীর্ঘ আড়াই বছর পর বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোকজন সবাই দেখছে, আমিও দেখছি ওরা মেয়েডারে কিভাবে গুলি কইরা মারছে। যা ঘটনা হইছে, সব কইমু আদালতে। যারা মেয়েডারে মারছে, তাদের যানি ফাঁসি হয়।”

ফেলানীর বাবা ও মামার পাশাপাশি সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন, বিজিবি-৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক খালেদও।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৮ অগাস্ট ফেলানীর বাবাসহ চার সাক্ষী ভারতে যাচ্ছেন। পরদিন তারা বিএসএফের আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।

“২২ অগাস্ট বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে তারা (বিএসএফ) আমাদের জানিয়েছেন,” বলেন বিজিবি প্রধান।

তিনি বলেন, “সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিচারের এটাই প্রথম ঘটনা এবং এটা একটা মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”

বিচার নিয়ে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ফেলানী হত্যার ব্যাপারে একটি ‘স্বস্তিময়’ উপসংহার চায় সরকার।

“এ হত্যার ঘটনায় ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না।”