‘আনসারুল্লাহ’ নেতা মুফতি জসীম কারাগারে

উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ আটক ৩১ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2013, 01:29 PM
Updated : 13 August 2013, 02:21 PM

মঙ্গলবার দুপুরে মুফতি জসীমকে ১০ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুখ্য বিচারিক হামিক আদালতে হাজির করে আবেদন করে পুলিশ।

আদালত ২১ অগাস্ট শুনানির পরবর্তী দিন রেখে তাকে জেল হাজতে পাঠায় বলে জানান বরগুনার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী একজন উগ্রপন্থী নেতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার পল্লবী ও উত্তরা থানায় দুটি মামলা রয়েছে।

“এরমধ্যে পল্লবী থানার মামলায় তিনি ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি। উত্তরা থানার মারামারির মামলায় আসামি তিনি।”

সোমবার দুপুরে বরগুনা শহরের উপকণ্ঠে দক্ষিণ খাজুরতলা এলাকার জলিল মাস্টারের বাড়ি থেকে গোপন বৈঠক চলাকালে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে আটক করা হয়।

এরা হচ্ছেন- আবদুর রহমান মাতুব্বর, আশ্রাব আলী, আউয়াল সিরাজ, ইউসুফ আলী মৃধা, আলমগীর হোসেন, মো. জামাল হোসেন, আবদুল জব্বার, বাদল, ক্বারি আবদুস সালাম, আবু সালেহ, মোহাম্মদ হাসান, মো. আসলাম, আবদুল্লাহ, নাঈম, আল-আমিন, আবুল কালাম, ফোরকান, আবুল হাসান, মিজানুর রহমান, আবু সালেহ, আইউব আলী, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সেলিম, মনিরুজ্জামান, মাঈনুদ্দীন, শহিদুল ইসলাম, খলিল হাওলাদার, জোনায়েত ইসলাম, আবদুল জলিল ও মহিব্বুল্লাহ।

এদের মধ্যে আইউব আলী, খলিলুর রহমান ও আবদুল জলিল মুফতি জসীম উদ্দিনের আপন ভাই। গ্রেপ্তার সকলের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তারা সবাই মুফতি জসীম উদ্দিনের অনুসারী। তার আমন্ত্রণে বয়ান শোনার জন্য ওই বাড়িতে তারা গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের জন্য দুপুরের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

বরগুনা থানার ওসি (তদন্ত) পুলক চন্দ্র রায় জানান, ৩১ জনের বিরুদ্ধে সোমবারই উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাফর হোসেন বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেছেন।

বছিলার অফিসে অভিযান

মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর ঢাকার বছিলায় মসজিদ সংলগ্ন তার কার‌্যালয়ে মঙ্গলবার তল্লাশি চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল দুপুরে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু বই এবং অর্ধ শতাধিক সিডি উদ্ধার করে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান তল্লাশির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বছিলায় মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার নীচতলায় মসজিদ। পাশে টিনশেডে জসীম উদ্দীনের অফিস, পরিবার নিয়ে থাকার ঘর, কম্পিউটার কক্ষ, লাইব্রেরিসহ আটটি কক্ষ রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশ এই কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালায়। এ সময় মাদ্রাসার কোন শিক্ষার্থী, পরিবারের কোন সদস্য বা কোন কর্মচারী সেখানে ছিল না। গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা আগেই সটকে পড়ে বলে পুলিশের ধারণা।

এছাড়া সোমবার জসীমউদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই অফিস থেকে কম্পিউটারসহ মূল্যবান অনেক কিছু সরিয়ে ফেলেছে তার অনুসারীরা। 

তল্লাশি শেষে পুলিশ কক্ষগুলোতে তালা লাগিয়ে চলে আসে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।   

কে এই মুফতি জসীম

মুফতি জসীম উদ্দিন বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামের মৃত নূর হাওলাদারের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ জসীম উদ্দিন বরগুনা শহরের ইসলামিয়া হাফেজি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শায়খুল হাদিস আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত জামেয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন।

সেখান থেকে ১৯৯০ সালে প্রথম দাওরা (মাওলানা) পাস করেন। এরপর তিনি ভারতের দেওবন্দে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তী সময়ে হায়দরাবাদের সাবেলুস সালাম মাদ্রাসা থেকে মুফতি (ফিকা শাস্ত্রে) পাস করেন।

এরপর তিনি ঢাকার জামেয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ও বরিশালের মাহমুদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।

২০০৪ সালে তিনি বরগুনা কেন্দ্রীয় সদরঘাট জামে মসজিদে প্রধান খতিব হিসেবেও চাকরি করেন। পরে তিনি সৌদি আরবের মদিনায় লিসানস বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

এরপর দেশে ফিরে প্রথমে ধানমন্ডির হাতেমবাগ মসজিদের খতিব ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া নামে একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

মুফতি জসীমউদ্দিন মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।

এই মারকাজুলের অধীন তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওয়াজ, জুমার নামাজের খুতবা, পুস্তিকা ছাপিয়ে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্র মতবাদ প্রচার এবং তরুণদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন।

একই সঙ্গে তিনি গোপন জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে।