হরতালে সংঘর্ষ বিস্ফোরণ অগ্নিসংযোগ, আটক ৩৫

সংঘর্ষ, বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও অবরোধের মধ্য দিয়ে জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলছে সারাদেশে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2013, 06:24 AM
Updated : 13 August 2013, 07:44 AM

বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

গত ১ অগাস্ট এক রিট আবেদনের রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী নিবন্ধন না থাকলে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। 

এর প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে মঙ্গলবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ:

রাজশাহী: টানা দুই দিনের হরতালের প্রথম দিনে রাজশাহীতে ট্রাকে অগ্নিসংযোগ এবং হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। নগরী থেকে ছয় শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে একটি মালবাহী ট্রাকে আগুন দেয়া ছাড়াও কয়েকটি স্থানে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তবে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে  তারা  তা করতে পারেনি।

নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সকালে  নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছয় শিবির কর্মীকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।

পুলিশ জানায়, হরতালের সমর্থনে ভোর ৫টার দিকে হরিয়ান বাইপাস সড়কে একটি মালবাহী ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় শিবির কর্মীরা।

ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তারা পালিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর পরপরই মহানগরীর মতিহার থানার দেওয়ানপাড়া এলাকার শহীদ জিয়া কলেজের সামনে থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। সেখানে মিছিল থেকে বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

এরপর সকাল সোয়া ৭টার দিকে মহানগরীর শাহ মখদুম থানার পোস্টাল একাডেমীর সামনে থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের হয়। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবির।

তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই সেখান থেকে তারা সটকে পড়ে বলে জানান ওসি আলমগীর।

ফেনী: মঙ্গলবার ভোরে শহরের শিশু নিকেতনের সামনে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহরের বড় জামে মসজিদের সামনে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের দাগনভূঞার সিলোনিয়ায় বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করার কিছুক্ষণ পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শহরের খাজুরিয়া এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে রিকশা ভাংচুর করেছেন শিবিরকর্মীরা।

বড় জামে মসজিদের সামনে পিকেটারদের ধাওয়া করে পুলিশ ও র‌্যাব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শটগানের গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।

বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

মেহেরপুর: হরতালে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সড়ক অবরোধ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়েছে। আটক করেছে দুইজনকে।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোফাজ্জেল হোসেন জানান,  জামায়াতের মারমুখী জঙ্গি ভূমিকার কারণে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়। এই সময় জামায়াতকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোঁড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাইরে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ তলব করা হয়েছে। 

পুলিশ জানায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, বারাদি বাজার ও  রাজনগরের এআরবি কলেজ সংলগ্ন সড়ক এবং মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী বাজার ও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাড়াডোব বাজারের সড়কে গাছের গুড়ি ও ডালপালা ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব চালায়।

গাড়াডোব বাজারে পুলিশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।  এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ৪৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ১৩ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে গাংনী থানার ওসি মাসুদুল আলম সহ ১০ পুলিশ আহত হয়। এ সময় পুলিশের পাল্টা ব্যবস্থায় জামায়াতের ৪০ নেতাকর্মী আহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সুজন ও আরিফ নামের দুই শিবির কর্মীকে আটক করে।  

সিলেট: নগরীতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা এবং কয়েকটি স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।

সকাল সোয়া ৭টায় পাঠানটুলা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন শিবিরকর্মীরা। এ সময় তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর তারা সেখান থেকে চলে যান।

পৌনে ৮টায় মেডিকেল রোড ও ৮টায় শাহী ঈদগাহ এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে হরতালকারীরা।

সকাল থেকে নগরীতে কিছু সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করলেও ভারী যানবাহন চলছে না।

সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। তবে যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।

হরতালে যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাব ও বিজিবির টহল।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন জানান, হরতাল শন্তিপূর্ণভাবে চলছে। কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বরিশাল: নগরীর লাকুটিয়া সড়কের মোবাইল টাওয়ার এলাকায় ঝটিকা মিছিল, টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে হরতালকারীরা।

বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল্লাহ জানান, কয়েকজন শিবিরকর্মী হরতালের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।

পরে তারা টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানান ওসি।

পরে পুলিশ গিয়ে সড়কের উপর থেকে টায়ার সরিয়ে নেয়।

সিরাজগঞ্জ: সকালে বগুড়া-নগরবাড়ি সড়কে উল্লাপাড়ার বালসাবড়ি এলাকায় পিকেটিং করার সময় উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এরা হলেন উপজেলা আমির শাহজাহান আলী এবং কর্মী বোয়ালিয়া এলাকার মাহবুব হোসেন বাবলু।

উল্লাপাড়া থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকালে শহরের তেলকুপি বটতলা এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকারবিরোধী নানা শ্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যায়।

হরতালের প্রথম দিন সকালে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।

চাঁদপুর: হরতালের প্রথম দিন সকালে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১১ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে কচুয়ায় তিন জন, হাইমচরে এক জন, ফরিদগঞ্জে দুই জন ও সদরে পাঁচ জন রয়েছেন।

হরতালে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহান ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে ছোট ছোট যান চলাচল করছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানান, হরতালে নাশকতার চেষ্টার সময় ১১ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝালকাঠী: ঝালকাঠীর চার উপজেলায় তিন জামায়াত এবং এক শিবিরকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

মঙ্গলবার সকালে আটক করা হয় কাঠালিয়া উপজেলা জামায়াতের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ফোরকান তালুকদার (৪৫), নলছিটির মোল্লারহাট ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আব্দুস সালাম (৩৫) এবং রাজাপুরের জামায়াতকর্মী নেছার আলীকে (৪০)।

এছাড়া জেলা শহর থেকে সোমবার গভীর রাতে ইব্রাহিম হাওলাদার নামে এক শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট চার থানার ওসিগণ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাগুরা: মাগুরার শালিখা উপজেলা থেকে মঙ্গলবার সকালে পাঁচ জামাত-শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। 

শালিখা থানার ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহ জানান, হরতালে নাশকতা সৃষ্টির আশংকায় শতখালি ও ছয়ঘরিয়া থেকে মফিজুর রহমান (৪০), ফয়সাল হোসাইন (২০), তোতা মিয়া (৩৫), জহির হোসেন (২৩) ও বশির মোল্যাকে (২৪) আটক করা হয়।

লক্ষ্মীপুর: জেলা শহরে টায়ারে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে হরতালকারীরা।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উত্তর বাজারে রায়পুর-চৌমুহানী সড়কে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

দক্ষিণ তেমুহনী রামগতি-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কেও একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।