ঈদের ছুটির পরপরই এ হরতালে জামায়াত-শিবির কর্মীরা যাতে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা ঘটাতে না পারে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যক সদস্যরা মঙ্গলবার ভোর থেকেই রাজধানীর প্রতিটি সড়ক অবস্থান নেয়।
তবে এর মধ্যেও সকাল ৭টার দিকে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের একটি ঝটিকা মিছিল থেকে অন্তত চারটি ককটেল ফাটানো হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয় বলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াৎ জানান।
তিনি বলেন, “হাতবোমা ফাটানোর পর র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে ইসলামাইল হোসেন বাবু নামে একজনকে অাটক করে। সে নিজেও হাতবোমায় কিছুটা আহত হয়েছে।”
এর আগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুরের কল্যাণপুরে ও যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
যাত্রাবাড়ী থানার উপ পরিদর্দশক এমরানুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মিছিলকারীরা সরে যায়।
হরতালের প্রথম তিন ঘণ্টায় রাজধানীর কোথাও কোনো যানবাহনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার জানান।
হরতালের কারণে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, হরতালে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত আছে। নাশকতা ঘটাতে গিয়ে কেউ হাতেনাতে ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য ডিএমপির প্রতিটি জোনে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় আছে।
গত ১ অগাস্ট এক রিট আবেদনের রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। দেশের আইন অনুযায়ী নিবন্ধন না থাকলে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
আদালতের রায়ের দিনই এক বিবৃতিতে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে জামায়াত। দলের প্রচার বিভাগের নেতা মো. ইব্রাহিমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে হরতালের পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে ঈদের পরপরই হরতাল ডাকায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে জমায়াত। অনেকে ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকেট কিনেও পরে হরতালের খবরে তা ফেরত দেন।
জামায়াত প্রথমে ১২ ও ১৩ অগাস্ট এই হরতাল করার ঘোষণা দিলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে পরে তা একদিন পিছিয়ে ১৩ ও ১৪ অগাস্ট করা হয়। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, ঈদুল ফিতরের ছুটির পর মানুষের কর্মস্থলে ফিরে আসার কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি পুনর্নির্ধারণ করা হল।
এদিকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় ইতোমধ্যে রফিকুল ও ইব্রাহিমকে তলব করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ জানাতে ১৬ সেপ্টেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছে।