আদিলের নির্দেশে তথ্যবিকৃতি: প্রেসনোট

দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণেই মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে ‘আইনসঙ্গতভাবে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এক প্রেসনোটে জানিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2013, 12:12 PM
Updated : 12 August 2013, 12:12 PM

বিদেশি কয়েকটি সংস্থা এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আদিলের গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে তার মুক্তি দাবি করার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এই প্রেসনোট দেয়।

অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দীন আহমেদের স্বাক্ষরিত এই প্রেসনোটে গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামীর অবরোধ কর্মসূচি, রাতে শাপলা চত্বর থেকে হেফাজত কর্মীদের সরাতে পুলিশি অভিযান এবং এ বিষয়ে অধিকারের প্রতিবেদন ও সরকারের অবস্থানও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘আদিলের নির্দেশনায়’ অধিকার মতিঝিলে গত ৫ মের অভিযান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৬১ জন নিহত হওয়ার যে তথ্য দিয়েছে তা ‘মিথ্যা ও  কাল্পনিক’। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও দেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করা’।

হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রচার এবং রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ডানঘেঁষা মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রোববার আদালতে হাজিরের পর হাকিম আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে সোমবার রিমান্ড স্থগিত করে কারাফটকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় হাই কোর্ট। 

প্রেসনোটে বলা হয়, “তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এর ৫৭ (১) ও (২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (জিডি নং-৫১৪, তারিখ: ১০/০৮/২০১৩) দায়েরের পরই তাকে তার গুলশানের বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণে তাকে আইনসঙ্গতভাবে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের তুলতে গত ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে অধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যপ্রমাণ চেয়ে গত মাসে চিঠি দেয়া হয়।

তবে ফিরতি চিঠিতে সাক্ষী ও ভিকটিমদের নিরাপত্তার কথা বলে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় অধিকার।

সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়, আদিল কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির নির্বাহী হিসেবে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। অধিকারের প্রতিবেদনে ‘শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড চালানোর’ কথা বলে ভিত্তিহীন প্রচার আদিলের নির্দেশনাতেই চালানো হয়।

“অধিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।”

প্রেসনোটে বলা হয়, প্রতিবেদনে ৫ মে দিনব্যাপী হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় নিহত কয়েকটি মৃতদহ ও আহত কয়েকজনের ছবি ‘কম্পিউটারে ফটোশপের সাহায্যে’ জোড়া লাগিয়ে রাতের অভিযানে তারা নিহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এর মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বলেও প্রেসনোটে উল্লেখ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রেসনোটে বলা হয়, হেফাজতকর্মীরা বিভিন্ন রাস্তার বিদ্যুতের খাম্বা উপড়ে ফেলায় সন্ধ্যার পর শাপলা চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে শাপলা চত্বরের আশপাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন লক্ষ্য করে হেফাজতকর্মীরা হামলা চালাতে থাকে। হিংসাত্মক হামলা থেকে বিরত থাকার পর তাদের হামলার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকাকে ‘ধ্বংসাত্মক হামলা থেকে’ রক্ষার জন্যই ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হয় বলে প্রেসনোটে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।  

এতে বলা হয়, ওই অভিযানে পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী ‘প্রাণঘাতি নয় এমন অস্ত্র’ (টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও রাবার বুলেট) ব্যবহার করে, যাতে ‘১০ মিনিটের মধ্যেই’ হেফাজতকর্মীরা স্থান ত্যাগ করে।

“তবে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংগঠিত হয়ে অলিগলির ভেতর থেকে কিছুক্ষণ হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারাও পালিয়ে যায়।”

প্রেসনোটে বলা হয়, অভিযানের সময় বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন এবং কয়েকটি টেলিভিশন পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করে। রাতের অভিযানে কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার না করায় কোনো মৃত্যুও ঘটেনি। তবে দিনের বেলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে মোট ১১ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

“অধিকার ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে একটি কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য ইন্টারনেটে বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এর ৫৭(১)(২) ধারায় অপরাধ।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অধিকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

এ ধরনের অপরাধের শাস্তি দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা বলেও প্রেস নোটে উল্লেখ করা হয়।