ঘরের মায়ায় দুনিয়া ছাড়লেন ফাতেমা

বর্ষার শুরুতে পাকাঘর বা তাঁবুতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১৫ বছরের ঠিকানা সেমিপাকা ঘরটি ছাড়তে রাজি না হওয়াই কাল হল চট্টগ্রামের পোশাককর্মী ফাতেমা ও তার মেয়ের।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2013, 10:45 AM
Updated : 28 July 2013, 05:33 PM

রোববার ভোরে নগরীর লালখান বাজার এলাকায় আকবরের কলোনিতে টাঙ্কির পাহাড়ের একাংশ ধসে নিহত হন ফাতেমা (৩৫) ও তার মেয়ে কুলসুম (১৭)। 

ফাতেমার বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া গ্রামের খিলমেহের গ্রামে। নগরীর ফকিরহাট এলাকায় ফোরএস গার্মেন্টেসে কাজ করতেন মা-মেয়ে। ঘটনার সময় ফাতেমার স্বামী মান্নান বাসায় না থাকায় তিনি বেঁচে যান।

কলোনির মালিক আলী আকবরের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রায় ২০ বছর আগে স্থানীয় মুসা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা নয় গণ্ডা জমি কিনে একটি তিনতলা ভবন ও কয়েকটি সেমিপাকা ঘর তৈরি করেন এবং ভাড়া দেন।

“প্রায় ১৫ বছর ধরে একটি সেমিপাকা ঘরে ভাড়া থাকতেন ফাতেমা ও তার মেয়ে। ফাতেমার স্বামী মান্নান কিছুদিন পর পর আসতেন।”

বর্ষার শুরুতে ফাতেমাকে সেমিপাকা ঘর ছেড়ে তিনতলার একটি ঘরে চলে আসতে বলা হয়, কিন্তু সে রাজি হয়নি বলে জানান সুফিয়া খাতুন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের তাঁবুতে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এই কলোনির কেউ সেখানে যায়নি।

ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য নগরীর টাইগার পাস এলাকার নবদিগন্ত ক্লাব ও সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় দুইশ তাঁবু খাটায়।

বাটালি পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুইশ পরিবারকে গত মে মাস থেকে এসব তাঁবুতে সরিয়ে নেয়া হয়।

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। ছবি:সুমন বাবু/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কিন্তু ফাতেমা তার ১৫ বছরের ঠিকানা ছেড়ে যেতে রাজি না হওয়াতেই পাহাড় তার জীবন কেড়ে নিল- ফাতেমার লাশের পাশে বসে সেকথা বলেই বিলাপ করছিলেন তার বোন শামসুন নাহার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সপ্তাহখানেক আগে ফাতেমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়। অন্য ভাই-বোনরা নগরীর মতিঝর্ণা এলাকায় থাকেন। কিন্তু ফাতেমা অনেক বছর ধরে এখানেই থাকে।

“আজ সকালে খবর পেয়ে এসে দেখি আমার বোন আর বোনজি নেই।”

প্রাণে বাঁচলেন শাহনাজ 

প্রতিবেশী শাহনাজ বেগম ফজরের আজানের পর ফাতেমার ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময়ই বিকট শব্দে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে।

শাহনাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তখন ফাতেমার ঘরে যাচিছলাম। ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই বিকট শব্দ করে পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় মাটিতে আমার দুই পা আটকে যায়।”

“‘বাঁচাও, আমারে বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিই। কলোনির এক লোক এসে টেনে মাটির নিচ থেকে আমাকে বের করে।”

শাহনাজ জানান, পাহাড় ধসের শব্দে ফাতেমা জেগে ওঠে। তখন সেও বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। মেয়ে কুলসুম ছিল ঘুমন্ত। এরমধ্যেই ঘরের ওপর মাটি এসে পড়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই মাটিচাপায় ফাতেমা ও কুলসুম মারা যায়।

পরে স্থানীয়রা ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।