শেখ হাসিনাকে আশীর্বাদ রমা চৌধুরীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে আশীর্বাদ করেছেন বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2013, 09:23 AM
Updated : 27 July 2013, 09:50 AM

একাত্তরে সম্ভ্রম হারানোর পর টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এই নারী শনিবার গণভবনে যান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে।

তিনি যখন গণভবনে, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ গোলাম সবুর টুলুর জানাজা অনুষ্ঠানে।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে গণভবনে ঢুকে শেখ হাসিনা সরাসরি যান হল ঘরে, সেখানেই ছিলেন রমা চৌধুরী।

শেখ হাসিনা ঢুকেই রমা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেন, তখন কেঁদে ফেলেন রমা।

এরপর শেখ হাসিনা এই বীরাঙ্গনাকে নিজের পাশের সোফায় বসিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন।

কুশল বিনিময়ের পরই রমা চৌধুরী তার লেখা ’৭১ এর জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রীও তখন তার লেখা বইগুলো রমা চৌধুরীকে দিতে নিজের বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিলকে বলেন।

রমা চৌধুরীকে লেখা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা এখনো অনেকের কাছে অজানা।

রমা চৌধুরী তার জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলো প্রধানমন্ত্রীকে বলেন। কথা শুনতে শুনতে মাঝে মধ্যে শেখ হাসিনা তাকে সান্ত্বনাও দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালি পায়ে দেখা করতে আসেন রমা চৌধুরী। ১৯৭১ সালের ১৩ মে বোয়ালখালীতে নিজের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করার পর জুতা পরেন না এই নারী।

আলাপের এক পর্যায়ে নিজের বোন এবং দু’বোনের সন্তানেরা কোথায় কী করেন- তা বলেন শেখ হাসিনা। রমা চৌধুরীও আগ্রহ নিয়ে সেসব কথা শোনেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা তো দু’বোনই বেঁচে আছি। আমাদের একটাই সাধনা, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।”

শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের আরো সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ জানান রমা চৌধুরী।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “সব কাজই বিপজ্জনক। সবখানেই রাজাকার আর খুনিরা আছে।”

গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রমা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “তুমি বয়সে আমার ছোট হবে। তোমাকে আশীর্বাদ করি। যেন তোমার সব অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পার।”

পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রমা চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে নিয়ে যান মাহবুবুল হক শাকিল।

প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম গেলে তাকে বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়ে যান রমা চৌধুরী।

১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে রমা চৌধুরী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একাত্তরের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে পোপাদিয়ায় গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন রমা চৌধুরী, তার স্বামী ছিলেন তখন ভারতে।

ওই দিন সেই এলাকার দালালদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী রমা চৌধুরীদের বাড়িতে হানা দেয়। দুই সন্তানের জননী রমাকে ধর্ষণের পর তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

বাড়িহারা রমার দুই সন্তান পাঁচ বছর বয়সি সাগর এবং তিন বছর বয়সি টগর দুই বছরের মধ্যেই মারা যান। তার আরেকটি সন্তানও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের এই বীরাঙ্গনা চট্টগ্রামের রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে নিজের লেখা বই বিক্রি করেন। এই পর্যন্ত তার ১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।