সাক্ষ্য নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মুনীর চৌধুরীর ছেলে

একাত্তরে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ ও হত্যায় অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2013, 05:33 AM
Updated : 18 July 2013, 02:52 PM

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর এই সন্তান।

তবে বুধবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদের মামলার রায়ের তারিখ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ অসমাপ্ত রেখেই আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যখন আল বদর বাহিনীর সদস্যরা ধরে নেয়, তখন আসিফ মুনীরের বয়স ছিল চার বছর।

সাক্ষী আসিফ মুনির তার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরে সাক্ষ্য দেন; যাতে বিধৃত হয়, কিভাবে তিনি তার কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীর চক্ষুশূল ছিলেন।

আসিফ মুনীর বলেন, “আমার বাবা পঞ্চাশের দশকে বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। যদিও পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে সরে আসেন তিনি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী নীতি এবং কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তার লেখনী।”

“তিনি একইসঙ্গে নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গল্পকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে নাট্যকার হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করার জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছে। ১৯৫৩ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘কবর’ নাটকটি জেলখানায় বসেই লেখা।”

জবানবন্দিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাবার অবদানের কথাও বর্ণনা করেন আসিফ মুনীর।

“তিনি বাংলা টাইপ রাইটারের কি-বোর্ড লেআউট ‘মুনির অপটিমা’ তৈরি করেন। বর্তমানে বিজয় কি-বোর্ডের প্রবর্তক মোস্তফা জব্বার কি-বোর্ড লেআউটটি মুনির অপটিমা থেকেই গ্রহণ করেন।”

সাক্ষ্যে পারিবারিক বর্ণনাও দেন মুনীর চৌধুরীর তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট এই ছেলে।

মুনীর চৌধুরীর তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় আহমদ মুনীর ভাষণ একাত্তরে ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন বলে ছোট ভাই আসিফ জানান। তিনি এখন জাতিসংঘের হয়ে আইভরি কোস্টে কাজ করছেন।

মুনীর চৌধুরীর মেজ ছেলে আশফাক মুনীর মিশুক (মিশুক মুনীর) ২০১১ সালের ১৩ অগাস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ।

আসিফ মুনীর জানান, তাদের মা লিলি চৌধুরীর বর্তমান বয়স ৮৪। মিশুক মুনীর মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

আসিফ মুনীরের সাক্ষ্যগ্রহণের আগে এই মামলার প্রথম সাক্ষী মাসুদা বানু রত্নাকে জেরা করেন আসামিদের রাষ্ট্র নিয়োজিত দুই আইনজীবী আব্দুর শকুর খান এবং সালমা হাই টুনি।

গত ২৪ জুন এই দুই আসামি চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের অনুপস্থিতেতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।

এর আগে গত ৪ জুন বিদেশে অবস্থানরত এ দুই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান

আশরাফুজ্জামান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।

এই দুজনের আগে অনুপস্থিতিতেই ট্রাইব্যুনালে বিচার হয় আবুল কালাম আযাদের এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে।

আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেয়ার নীলনকশা অনুযায়ী স্বাধীনতার ঠিক আগে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।

তারা দুজনেই জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ‘সক্রিয় অবস্থান’ নেন।

আশরাফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর।

আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞার চানপুরে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন মো. আতাউর রহমান।