‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তৎপর গোলাম আযম’

একাত্তরের স্বাধীনতার আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধের পর বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধ্বংস করার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

হুসাইন আহমদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2013, 08:07 PM
Updated : 14 July 2013, 08:07 PM

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় থেকে শুরু করে প্রায় আট বছর পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান।

১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন তিনি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই গণআদালতের কথা স্মরণ করে আনিসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে তিনি (গোলাম আযম) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে সমস্ত ষড়যন্ত্র করেছিলেন আমার অভিযোগে তার বয়ান আছে।”

ওই অভিযোগনামায় তিনি বলেছিলেন, “তিনি (গোলাম আযম) সর্বদা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছেন এবং এখনো করছেন; বিশেষ করে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সশরীরে উপস্থিত থেকে, বক্তৃতা ও আলোচনার মাধ্যমে, স্মারকলিপি ও বিবৃতির দ্বারা, মুদ্রিত ও প্রকাশিত প্রচারপত্র ও প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে এবং সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজে এবং অপরের দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে দুর্বল ও সহায়হীন, বিচ্ছিন্ন ও বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলী ও খাজা খয়েরউদ্দীনের সঙ্গে মিলে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন ও ১৯৭২ সালে লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন; যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও লিবিয়ায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দেয়া; ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামি যুব সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মুসলিম রাষ্ট্রেরগুলোর সাহায্য প্রার্থনা এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত সাতবার সৌদি বাদশাহের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিয়ে হস্তক্ষেপ করার ও আর্থিক সাহায্য না দেয়ার অনুরোধ।

গণআদালতের প্রায় ১৮ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ওই অভিযোগগুলো বিবেচনায় নেয়নি।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর এখন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার করার দাবি জানিয়েছেন গণআদালতসংশ্লিষ্ট নাগরিকরা।

আনিসুজ্জামান বলেন, “সেখানে গোলাম আযমের বিচার হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনে ভূমিকা নেয়ার জন্য।

“কিন্তু, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি যেসমস্ত ষড়যন্ত্র করেছেন, তা তার যুদ্ধকালীন অপরাধের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে।”

স্বাধীনতার পর তার করা অপরাধের বিচার হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।

একারণে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অভিযোগে মামলা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, যিনি গণআদালতের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

আনিসুজ্জামানের সাক্ষ্যের কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৭৮ সাল পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনি (গোলাম আযম) যে চক্রান্ত করেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। এই মামলার পরে আমরা ওটার জন্য গভর্নমেন্টকে বলব।

“তিনি যতগুলো অপরাধ করেছেন, সবগুলোর মামলায় তার বিচার হতে হবে।”