চুদুরবুদুর শব্দের শুলুক সন্ধানে আনন্দবাজার

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের এক নারী সদস্যের মুখে যে শব্দ নিয়ে এতো হৈ হল্লা, সেই ‘চুদুরবুদর’ শব্দটি আদৌ অশ্লীল কি না- তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2013, 11:38 PM
Updated : 11 June 2013, 11:38 PM

আর এই চেষ্টায় বাংলা একাডেমীর অভিধান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরও শরণ নিয়েছে পত্রিকাটি। 

বিএনপির সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু গত রোববার সংসদ অধিবেশনে নিদর্লীয় সরকারের দাবি তুলে ধরতে গিয়ে নিজের জেলা ফেনীর আঞ্চলিক ভাষায় বলে ওঠেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত ন”।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই সংসদ সদস্যের বক্তব্য নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। রেহানা আক্তারের বক্তব্য ‘অশোভন’ দাবি করে তা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানান সরকারি দলের হুইপ আ স ম ফিরোজ।

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ওই বক্তব্য ‘পরীক্ষা করে’ ৩০৭ বিধি অনুযায়ী কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ভারতীয় বাংলাভাষী পাঠককে এই সংবাদ দিতে গিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, “চুদুরবুদুর গালাগালি নয়। তবুও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ উত্তাল হল এই একটি শব্দে। শ্লীল না অশ্লীল, তা নিয়ে দীর্ঘ বাদানুবাদ।”

‘চুদুরবুদুর গালি কি, বাংলাদেশে সংসদ উত্তাল’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তো বটেই, এ বাংলাতেও লঘু আড্ডায় চুদুরবুদুর আদৌ অপরিচিত শব্দ নয়।

“কলকাতার ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক নির্মল দাস, দুজনেরই অভিমত চুদুরবুদুর গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল কিছুতেই নয়। অর্থ বাড়াবাড়ি করা বা গড়িমসি করা।”

সাংসদ রেহানা আখতারের বিষয়ে আনন্দবাজারের পর্যবেক্ষণ, তার  মুখ এমনিতেই ‘বেশ লাগামছাড়া’। সরকারকে আক্রমণ করতে তিনি যে সব বাছা বাছা শব্দের তীর ছোড়েন, তার একটা বড় অংশই পরে কার্যবিবরণী থেকে মুছে ফেলতে হয়।

অবশ্য রেহানার বলা এবারের শব্দটির মধ্যে ‘অশ্লীল’ কিছু খুঁজে পায়নি আনন্দবাজার। 

ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্মল দাসকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি লিখেছে, রেহানার ফেনী জেলার পাশেই ফেনী নদীর ওপারে ত্রিপুরার সাব্রুম জেলা। দু’পারের ভাষায়ও যথেষ্ট মিল । চুদুরবুদুর শব্দটি সেখানেও চালু।

“শব্দটিকে কিছুতেই অশ্লীল বলা যাবে না। তবে ঠিক, ভদ্রসমাজে তেমন ব্যবহার হয় না। উল্টোপাল্টা কাজ করা, নড়বড়ে থাকা, ইত্যাদি অর্থ ধরে এই শব্দের ব্যবহার।”

রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, লেখক, গবেষক ও ভাষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারও আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘চুদুরবুদুর’ গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল নয়।

এই শব্দের শুলুক সন্ধানে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান থেকেও উদ্ধৃত করেছে আনন্দবাজার। 

“ওই অভিধানের প্রধান সম্পাদক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ওই অভিধানে চুদুবুদুর-এর তিনটি অর্থ দেওয়া হয়েছে। এক, বাড়াবাড়ি করা। সিলেট, পাবনা অঞ্চলে এই অর্থে ব্যবহার দেখা যায়। দুই, গড়িমসি। এই অর্থে ব্যবহার বেশি ময়মনসিংহ, ঢাকায়। তা ছাড়া এক ধরনের খেলাও রয়েছে, যার নাম চুদুরবুদুর।”

‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি কোথা থেকে এলো- পবিত্র সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার।

জবাবে তিনি বলেন, “এটা নিশ্চিতভাবেই অনার্য শব্দ। বাংলায় অনার্য শব্দের উৎস তিনটি। টিবেটো-বার্মান, অস্ট্রিক ও দ্রাবিড়। এরই কোনওটি থেকে এই ধ্বন্যাত্মক শব্দটি এসে থাকবে।”