ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক রোববার এই আদেশ দেন।
ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লবের জামিন আবেদন মঞ্জুর করলেও আসিফ মহিউদ্দিনের আবেদন নাকচ করেছেন তিনি।
অপর দুই ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ ও রাসেল পারভেজকে গত ১২ মে জামিন দিয়েছিলেন একই বিচারক।
ব্লগারদের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যরিস্টার জ্যেতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন মোল্লা ও আব্দুর রশীদ জামিন শুনানিতে অংশ নেন।
তারা বলেন, ব্লগাররা নবীকে নিয়ে অবমাননাকর কিছু লেখেননি। তারা জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন না।
তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী সরাসরি আদালতে এসে মামলা করার বিধান থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ তা মানেনি বলেও অভিযোগ করেন আইনজীবীরা।
অন্যদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন এ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব ও তাপস পাল।
হেফাজত ইসলাম নামের একটি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষাপটে গত ১ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রোপ্তারের পর শুভ, বিপ্লব ও পারভেজকে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসাবে রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
এর দুই দিনের মাথায় ৩ এপ্রিল সকালে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আসিফ মহিউদ্দিন নামের আরেক ব্লগারকে। তাকেও একইভাবে রিমান্ডে নেয়া হয়।
এরপর গত ১৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে এক মামলায় শুভ, পারভেজ ও বিপ্লব এবং অন্য মামলায় আসিফকে আসামি করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ এর ২ ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয় চার জনের বিরুদ্ধে।
গত ২১ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মামলা দুটি দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হলে বিচারক মামলা আমলে নেয়ার বিষয়ে শুনানির জন্য দিন রাখেন।
এই চারজনের মধ্যে শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। আর বিপ্লব ও রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন।
ব্লগে লেখালেখির জন্য সম্প্রতি হামলার মুখে পড়তে হয় আসিফকে। গত ১৪ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় তার ওপর হামলা হয়। ছুরিকাঘাতের গুরুতর জখম নিয়ে বেশ কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
ব্লগাদের এভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণজাগরণ মঞ্চ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে মৌলবাদীদের কাছে সরকারের ‘নতি’ শিকার হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিতে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদেই গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। পরে এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর মাঠে নামে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, যারা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে তাদের শাস্তি দাবি করে।