হরতালে কড়া নিরাপত্তা

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকে সারোদেশে হরতাল চলছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2013, 09:01 PM
Updated : 28 May 2013, 10:27 PM

আগের দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ এবং বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন দেয়ার পর বুধবার হরতালের শুরু থেকে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

হরতালে ট্রেন, লঞ্চ, বিমান চললেও দূরপাল্লার বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নগরীতে বাস ও ছোট যানবাহন চললেও প্রতিদিন সকালের চেনা ভিড় নেই বললেই চলে। 

হরতালে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দোকানপাটও সকালে তেমন খোলেনি।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান এবং র‌্যাবের টহলের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে হরতালকারীরা। আজিমপুরে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরেও হরতালের একইচিত্র। হরতালকারীদের মিছিল বের হলেই পুলিশ ধাওয়া দিচ্ছে। কয়েকটি স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টাও হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই হরতাল ডেকেছে বিরোধী দল।

হরতালে সকালে বিপণি বিতানগুলো খোলা না পেলেও বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের দোকানগুলো খোলা দেখা গেছে।

শাহবাগ এলাকার চা পান বিক্রেতা মো. নাসির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হরতাল হইলেও দোকান বন্ধ রাখলে সংসার তো চলবো না।”

পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। মঙ্গলবার বিকালে ওই এলাকায় কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের সহকারী উপকমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, “কেউ অন্যের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না।”

বিএনপি মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী শামসুজ্জাসান দুদু আগেই বলেছেন, ওই এলাকায় কোনো পিকেটিং হবে না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি বলেন, সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বে রয়েছেন।

এদিকে সকালে অন্যান্য দিনের মতো নির্দিষ্ট সময়েই ট্রেন চলাচল শুরু করে বলে কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল বশীর জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকালে শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটে।

সকাল ৬টার দিকে বরফকল মাঠ এলাকায় মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদুর রহমান রুশো ও শাহেদ আহম্মেদদের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সড়কে আগুন জ্বালানো হয়। তখন পুলিশ গিয়ে তাদের লাঠিপেটা করে।

পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষের সময় কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

এর আগে সকাল পৌনে ৬টায় শহরের কলেজ রোড এলাকায় মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রানা মুজিবের নেতৃত্বে হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একই ঘটনা ঘটে শহরের জিমখানা এলাকায়ও।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, জানমাল রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করছে হরতালকারীরা।

সকাল সকাল সাড়ে ৬টায় নগরীর সোবহানীঘাট এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকর্মীরা উপশহর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে।

তবে ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে এলে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেই সটকে পড়ে হরতালকারীরা।

সকাল ৮ টায় নগরীর জিন্দাবাজারে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে ছাত্রদল। পরে কোর্টপয়েন্ট ও জিন্দাবাজারে জেলা ও মহানগর বিএনপি মিছিল বের করে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন জানান, হরতালে কোনো ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা ঘটেনি।

মুদ্রা পাচারের একটি মামলায় তাকে লন্ডন থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে এই হরতাল দেয়া হয়েছে। একই দাবিতে মঙ্গলবারও ১০টি জেলায় হরতাল ডাকে স্থানীয় বিএনপি।

বিএনপি হুমকি দিয়েছে, খালেদা জিয়ার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না হলে তারা আরো হরতাল দেবেন।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, একজন ‘অপরাধী ও দুর্নীতিবাজকে’ রক্ষার জন্য বিএনপি যে হরতাল ডেকেছে, তা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি হতে পারে না।