পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ‘সমন্বিত’ সেনা ব্রিগেড

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি সেনাবাহিনীর একটি 'কম্পোজিট ব্রিগেড' প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2013, 01:12 AM
Updated : 26 May 2013, 04:47 AM

রোববার সেনাসদরে নির্বাচনী পর্ষদের সভায় দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরাপত্তা ও তদারকির কাজ সেনাবাহিনীকে প্রদান করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে একটি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ও দুটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।”

বিভিন্ন ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাতিরঝিল প্রকল্প, বনানী ওভারপাস, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্মিত থানচি ও রুমা সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর বহন করে।”

“সেই সঙ্গে সেনাবাহিনী জয়দেবপুর-মোমেনশাহী মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ করছে। মেঘনা-গোমতী সেতু মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছে”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক বাদ পড়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর এই বছরের শুরুতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সেনাবাহিনীকে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।

এর পর পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টে সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের কাজ তদারকি করা ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেয় সেতু বিভাগ।

ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদর অফিসার্স মেসে নির্বাচনী পর্ষদের এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী পর্ষদের সভায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল এবং কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতির বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।

সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরই দ্রুততম সময়ে সেনাসদরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৯ পদাতিক ডিভিশনের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

সেনাবাহিনীর কর্মতর্কাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনী পর্ষদের এ সভাটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই আপনারা যোগ্য অফিসারদের পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করবেন। এ দায়িত্ব ন্যায়পরায়ণতা ও সততার সাথে পালন করতে হবে।”

“যে সকল অফিসার সামরিক জীবনে সফলভাবে নেতৃত্ব করেছেন পদোন্নতিতে তারা অগ্রাধিকারে বিবেচিত হবেন। এ প্রশ্নে শৃঙ্খলার বিষয়টিকে আপোষহীনভাবে বিবেচনায় নিতে হবে”, যোগ করেন তিনি।

সরকার প্রধান এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, “নৈতিকভাবে বলীয়ান ও বিশ্বস্ততায় প্রশ্নহীন অফিসারদের আমাদের পদোন্নতি প্রদানে অগ্রাধিকারে বিবেচনা করতে হবে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংবিধিবদ্ধ আদেশের প্রতি আনুগত্যবোধকে অফিসারের অনিবার্য যোগ্যতা হিসাবে দেখতে হবে।”

সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রজ্ঞা, বিচার-বুদ্ধি এবং ন্যায়পরায়ণতার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে, আপনারা উচ্চ-প্রশিক্ষিত, কর্মোদ্যমী, সচেতন, প্রত্যুতপন্ন সর্বাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রের মূল নীতির প্রতি অবিচল থাকার ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বোতভাবে সফল হবেন।

সেনাবাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগে কথা এ সময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালবাসাই বঙ্গবন্ধুকে তার নিজের সন্তানদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।”

সেনাবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার ঊষালগ্নে সীমিতসংখ্যক অফিসার ও সৈনিক নিয়ে সেনাবাহিনীর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ সেই বাহিনী যথেষ্ট অভিজ্ঞ, সুসংগঠিত ও নবধারায় প্রশিক্ষিত একটি সুপরিকল্পিত বাহিনী।”