শ্রমিক নিরাপত্তা: যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি

বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ২৫ সদস্য।

লাবলু আনসার, নিউইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2013, 02:51 AM
Updated : 17 May 2013, 02:52 AM

সাভারে বুধবার ধসে পড়া বহুতল ভবন রানা প্লাজা।

কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনা রোধ ও শ্রমিকদের ক্ষমতায়নে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়াসহ আইন ও প্রশাসনিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।

কংগ্রেস সদস্যরা বৃহস্পতিবার এই চিঠি পাঠানোর আগে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্য জোসেফ ক্রাউলির বৈঠক হয়। ক্রাউলি নিজেও এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

সাভারে রানা প্লাজা ধসে প্রাণহানির ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে ঘটা বড় বড় দুর্ঘটনা এবং শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার প্রসঙ্গও এই চিঠিতে এসেছে।

এতে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু হিসাবে আমরা কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত, সুসংহত ও বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

“আমরা মনে করি, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের কয়েক মাসের মধ্যে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে  এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।”

গত বছরের নভেম্বরে সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা তাজরিন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী।

ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণসহ হতাহতদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কাজ শেষ হওয়ার আগেই গত ২৪ এপ্রিলে সাভারে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় ১১শর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে নয় তলা রানা প্লাজায় পাঁচটি পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন।

চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব এবং শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে তারা সচেতন।

“কিন্তু তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজার মতো একের পর এক দুর্ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, শ্রমিকদের দাবির বিষয়গুলো কারখানা মালিকদের কাছে পৌঁছানোর মতো সুযোগ এখনো অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি হয়নি, এমনকি তা জীবন-মরণ সমস্যা হলেও নয়।”

এসব ঘটনায় পোশাক খাতের শ্রমিকদের ঝুঁকিগুলো যে এখনো বড় মাত্রাতেই রয়েছে তা প্রতীয়মান হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

এছাড়া পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের বিষয়েও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কংগ্রেস সদস্যরা।

চিঠিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমরা বেশ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এর মধ্যে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টির পাশাপাশি শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের অমীমাংসিত মৃত্যু রহস্য, কারখানার অগ্নি নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কারখানায় কর্মীদের ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়ার বিষয়গুলোও রয়েছে।”

গত বছরের ৪ এপ্রিল সাভার থেকে নিখোঁজ হন পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল। পরদিন টাঙ্গাইলে তার লাশ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকা সফরে এসে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তও দাবি করেন।

কংগ্রেস সদস্যদের চিঠিতে বলা হয়, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,  আরো দুর্ঘটনা রোধ করতে এবং শ্রমিকদের ক্ষমতায়নে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে কর্মীদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়ার ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা ও আইনি কাঠামো তৈরির কোনো বিকল্প নেই।”

ডেমোক্রেটিক ককাসের ভাইস চেয়ার ও বাংলাদেশ কংগ্রেশনাল ককাসের প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ার জোসেফ ক্রাউলি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ও সাবেক স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি, প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক পার্টির হুইপ স্টেনি এইচ হোয়ের এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এছাড়াও স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসম্যান স্যান্ডার এম লেভিন, এডাম বি শিফ, চার্লস বি র‌্যাঙ্গেল, ক্যারোলাইন বি মেলোনি, গ্রেস মেং, ফ্রেডারিকা এস উইলসন, ম্যাডেলিন জি বরডালো, বারবারা লী, এলিসন ওয়াই শোয়ার্টজ, আর্ল ব্লুমেনোর, উইম ল্যাসি ক্লে, স্টিফেন এফ লীঞ্চ, জর্জ মিলার, রন কাইন্ড, ক্যারোলাইন ম্যাককার্থি,  জেমস পি মোরান, বেটি ম্যাককোলাম, কিথ এলিসন, রাশ হোল্ট, ক্রিস ভেন হোলেন, গ্যারি সি পিটার্স ও বিল পাসক্রেল জুনিয়র।