মহাসেনে নিহত ১২

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঘর ও গাছ চাপা পড়ে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন।

ডেস্ক রিপোর্টবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2013, 07:17 AM
Updated : 17 May 2013, 03:26 AM

বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালী থেকে এই মৃত্যুর খবর এসেছে, এর মধ্যে বরগুনায় পাঁচজন এবং পটুয়াখালীতে তিনজন নিহত হয়েছেন।  

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বাংলাদেশ উপকূলমুখী এই ঝড়ের প্রভাবে ঝড়ের গতিপথের বিপরীত দিকের দেশ শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি ও ভূমিধসে সাতজন নিহত হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর।

ঝড়ে কয়েক হাজার ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা।

ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর উপকূল অতিক্রম করে। এটি বৃষ্টি ঝরিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়, এই কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী দাবি করেছেন।

ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিশেষ প্রার্থনা করতে বলেছেন দেশবাসীকে।

অন্যদিকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দ্রুত পৌঁছাতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে বামনা উপজেলায় তিনজন এবং বেতাগী ও তালতলীতে একজন করে মারা গেছেন।

বামনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, জয়নগর এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪২) ঘরচাপা পড়ে, লক্ষ্মীপুরা গ্রামের সন্তানসম্ভবা ঝুমুর আক্তার নাদিরা (২৫) আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে আছড়ে পড়ে এবং একই এলাকার মোশাররফ হোসেন (৫৫) ঘরচাপা পড়ে মারা যান।

বেতাগী থানার ওসি বাবুল আখতার জানান, পূর্ব আলীপুর গ্রামের সৈয়দ আলী খান (৭৫) নামে এক ব্যক্তি গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন।

এছাড়া আমখোলা গ্রামে গাছচাপা পড়ে চাঁন মিয়া (৬০) নমে আরেকজনের মৃত্যু হয় বলে তালতলী থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান।

বেতাগীর কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বকুলতলীতে মারা গেছে আবির হোসেন নামে ৬ বছর বয়সী এক শিশু।

বেতাগী থানার ওসি বাবুল আখতার জানান, ঘরের ভেতরে থাকলেও বজ্রপাতে ‘আতঙ্কিত হয়ে’ শিশুটির মৃত্যু হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, লালমোহনে একজন এবং চরফ্যাশনে তিনজন মারা যান।

তারা হলেন- আবুল কাশেম (৬৫),  রফিকুল ইসলাম (৬৫) ও শিশু পারভেজ (৬) ও নীপা (১০)।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদ জানান, সকাল ৮টার দিকে লালমোহনের ধলিগৌরনগর এলাকায় গাছচাপা পড়ে মারা যান আবুল কাসেম।

রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন জানান, চর ফ্যাশনের চর মাদ্রাজে ঘরচাপায় নিহত হয় পারভেজ। সে স্থানীয় মো. আলমগীরের ছেলে।

ভোলা জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চর ফ্যাশনের ঢালচরে ঘরচাপা পড়ে মারা যান রফিকুল ইসলাম।

চরফ্যাশনের চরপাকিলা গ্রামের রফিকের মেয়ে নীপা (১০) গাছ চাপা পড়ে মারা যায় বল উদ্ধারকর্মী মোহাম্মদ আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জানান, ঝড়ে গলাচিপা পৌর এলাকা ও কলাপাড়া উপজেলায় গাছের নিচে চাপা পড়ে এক নারী ও দুই শিশু নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে রিজিয়া পারভীন (৪৫) গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান বলে জানান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম।

এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর গ্রামের হাফিজাকে (৭ মাস) নিয়ে তার ফুপু জামিলা (৫৫) সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার সময় রাস্তায় তাদের ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজা। আহত জামিলাকে কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান।

দোকাশিপাড়া গ্রামের নিহত নাইম (১২) তার বাবার সঙ্গে সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী ঝড়ে জেলায় সাত হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

রাঙ্গাবালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে গলাচিপা, রাঙ্গাবালি ও দশমিনা উপজেলা তিনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া ঝড়ে আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক বলে জানান তিনি।

মহাসেনের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।

ভোলা সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উঁচু জোয়ার দেখা যায়। ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় জেলার বেড়ি বাঁধের বাইরের বিস্তীর্ণ এলাকা।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সদর, কবীরহাট, হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ঝড়ে অর্ধ-বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত মোট বাড়িঘরের সংখ্যা ৩৯২৬টি।

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় বুধবারই উপকূলের ১০ লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়। ঝুঁকি কমে গেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সবাই আবার ঘরে ফিরতে শুরু করেন।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বুধবার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঝড় কেটে যাওয়ার পর তা আবার সচল হয়েছে। শুক্রবার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামাও পুনরায় শুরু হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচলও বুধবার দুপুরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো, যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুনরায় চালু হয়।