ঝুঁকি কমে আসায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে বিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, “এখন বাংলাদেশ আশঙ্কামুক্ত। মহাসেন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় জানমালের ক্ষতির আর শংকা নেই। এজন্যে সমুদ্রবন্দরের বিপদ সংকেত নামিয়ে সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।”
তিনি জানান, মহাসেন বিকাল ৪টায় নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে সীতাকুণ্ড, ফেনী, খাগড়াছড়ি ও সংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে স্থল নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করছে।
এটি স্থলভাগের উপর দিয়ে আরো উত্তর পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে লঘুচাপে পরিণত হবে।
সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরায়ও এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হবে বলে জানান তিনি।
গত ১০ মে থেকে বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করা ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
এরপর পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ঝরিয়ে দুপুরে মেঘনা মোহনা হয়ে নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম শুরু করে এ ঝড়।
শাহ আলম জানান, উপকূলে এখন আর সাইক্লোনের প্রভাব না থাকায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “সংকেত কমিয়ে দিলেও সাগর উত্তাল থাকায় আগামী দুই দিন সব নৌযানকে নিরাপদ দূরত্বেই রাখতে হবে।”
ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় সাতদিন সাগর উত্তাল থাকায় সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
শাহ আলম জানান, সকাল থেকে প্রথম ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ৫০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। বেলা ১২টার পর এগোনোর গতিও কমে ঘণ্টায় ২০-২৫ কিলোমিটারে নেমে আসে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশের উপকূলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে প্রবল দমকা বাতাসের বৃষ্টি হয়। পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিধ্বস্ত হয় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি।
পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনায় ঝড়ে গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন ১০ জন। ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকা ১৫টি জেলার মধ্যে নয়টির অধিকাংশ এলাকায় সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোর নিম্নাঞ্চল ঝড়ের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বুধবারই ১০ কোটি টাকা এবং পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়।
এছাড়া ঝড়ের পরে উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণের জন্য ১৯টি হেলিকপ্টার, চারটি বিমান এবং নৌবাহিনীর ২২টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়।
ঝড় মোকাবেলায় পুলিশ ও বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী অনেক সংগঠন সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। উপকূলীয় জেলাগুলোতে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়।
ঝড়ের দাপট কমে আসার পর বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় প্রস্তুতি ভাল ছিল বলেই জানমালের ঝুঁকি অনেক কমে এসেছে।
ঝড়ের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
ঘুর্ণিঝড়ের কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর এবং শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঝুঁকি কমে আসায় চট্টগ্রাম বন্দর বৃহস্পতিবার বিকালেই খুলে দেয়া হয়। আর শাহ আমানত বিমানবন্দরে শুক্রবার সকাল থেকে বিমান ওঠানামা শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।