উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনী সোমবার রাতে জানিয়েছে, মঙ্গলবারই অভিযান শেষ করবে তারা।
ভয়াবহ এই ভবন ধসে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন।
১ হাজার ১১৫ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধারের পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১২ জন।
জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ১৭৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ধসে পড়া নয় তলা ভবন রানা প্লাজার সামনে সোমবার রাতে শেষ বারের মতো সাংবাদিকদের সামনে আসেন উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
গত ২৪ এপ্রিল এই ভবন ধসের পর থেকে উদ্ধার কাজে ছিলেন সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক।
মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী বলেন, ধ্বংসস্তূপে আর লাশ নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করে জেলা প্রশাসনের কাছে তারা ভবনের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তারা।
৫৬ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সেনাবাহিনীর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ সেলটি মঙ্গলবার থেকে সাভার সেনানিবাসে কাজ করবে। সাভার উপজেলায় মঙ্গলবার থেকে বিজিএমইএ’র তথ্য সেল কাজ করবে।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের পুরো এলাকা বাঁশ এবং কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ‘সংরক্ষিত’ এই এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে মোট ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।
এর মধ্যে ধসের সপ্তদশ দিনে পোশাক শ্রমিক রেশমা আক্তারকে উদ্ধার মর্মান্তিক এই ঘটনার মধ্যেও সবচেয়ে ‘আনন্দময় অর্জন’ বলে মন্তব্য করেন মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী।
দিনাজপুরের রেশমাকে গত শুক্রবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তুলে আনে উদ্ধারকর্মীরা। সাভার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রেশমা সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
রেশমাকে সাহায্য করতে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী বলেন, রেশমার সঙ্গে আলোচনা করেই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৮৩৪ জনের লাশ তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হযেছে। ৫৯টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে।
কোনো দাবিদার না থাকায় ২৩৪টি লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে তাদের ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে কেউ ভবিষ্যতে দাবি করলে পরিচয় সনাক্ত করা যায়।
পঙ্গু এবং গুরুতর আহত ১ হাজার জনের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে জানান মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী।
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে কেউ যদি কখনো সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে চান, সে সুযোগ খোলা থাকবে।
আহত শ্রমিক এবং নিহতদের স্বজনদের সাহায্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন জানান এই সেনা কর্মকর্তা, যার নেতৃত্বে এই উদ্ধার অভিযান সরকারের কাছে উচ্চ প্রশংসিত।
নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় মঙ্গলবার দুপুরে রানা প্লাজার সামনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সাভারের এই রানা প্লাজায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিলো। ২৩ এপ্রিল ভবনে ফাটল দেখা দিলে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
‘বেআইনিভাবে’ নির্মিত এই ভবনের মালিক কথিত যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন কারখানাগুলোর মালিকরাও। সাভার পৌরসভার দুই প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভবন ধসে এত প্রাণহানির ঘটনা বিশ্বে এটাই সবচেয়ে বেশি। ধ্বংস্তূপ থেকে সবচেয়ে বেশি সময় পর উদ্ধারের ক্ষেত্রে রেশমা বিশ্বের তৃতীয় ‘ভাগ্যবান’ ব্যক্তি।
এই ভবন ধসের পর শুরুতে স্থানীয়রাই উদ্ধার কাজ শুরু করে। এরপর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ অন্য সংস্থাগুলোকে নিয়ে সমন্বিত উদ্ধারকাজ শুরু হয়, যার নেতৃত্ব দেয় সেনাবাহিনী।
উদ্ধার কাজের সময় দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান স্বেচ্ছাসেবক এজাজ উদ্দিন কায়কোবাদ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরেও পাঠিয়েছিলো সরকার।
ভবন ধসের পর জীবিত উদ্ধারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হালকা যন্ত্র দিয়ে কনক্রিট কেটে কেটে উদ্ধার কাজ চলছিলো। ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিলো ভারী যন্ত্র দিয়ে উদ্ধার অভিযান।