‘শান্ত’ মতিঝিলে ধ্বংসের চিহ্ন

হেফাজতে ইসলামীর তাণ্ডবে রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধ শতাধিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান।

সুলাইমান নিলয়শেখ আবদুল্লাহ ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2013, 06:05 AM
Updated : 6 May 2013, 06:14 AM

ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত অর্ধশত ভবনে চালানো হয়েছে ভাংচুর। হামলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে।

সকালে মতিঝিলের রাস্তায় পড়ে ছিল সংঘর্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট, জ্বলন্ত কয়লার স্তূপ, ছাই, পুড়ে যাওয়া গাড়িসহ ধ্বংসাবশেষ।

সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিপুল পরিমাণ শুকনো খাবার, কয়েক হাজার জুতো, ভেঙে ফেলা রোড ডিভাইডার ও উপড়ে ফেলা গাছ যেন তৈরি করেছিল বিধ্বস্ত কোনো নগরীর চিত্র।

হেফাজতকর্মীদের দেয়া আগুনে পুড়েছে মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার ফুটপাতের সব দোকান। ঘরোয়া হোটেলের জেনারেটর ভাংচুর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাইভেট কারে আগুন দেয় তারা।

শাপলা চত্বরের রেলিংও উপড়ে ফেলেছে তারা। তাদের হামলার মুখে পড়েছে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা শাখা, জনতা ব্যাংক ভবনে আগুন দিয়েছে তারা।

এনসিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচে ভাংচুর করেছে হেফাজত কর্মীরা। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ের নিচের কাচ, ঢাকা চেম্বারের নিচে টি সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথ, প্রাইম ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখা কার্যালয়, ইস্টার্ন ব্যাংকের কার্যালয়, উত্তরা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক কার্যালয়েও ভাংচুর চালিয়েছে হেফাজত কর্মীরা।

মতিঝিলে বাংলা লিংকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার এবং দৈনিক বাংলায় এয়ার টেলের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ভাংচুর চালিয়ে তারা। 

হেফাজতের হামলার মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, চিনি ও খাদ্য শিল্প ভবনের দ্বিতীয় তলা, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের বিপরীতে বায়তুল ভিউ টাওয়ার।

সোমবার সকালেও মতিঝিলে গিয়ে দেখা মিলল আগের দিন হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডবের চিত্র।

পুলিশের দিকে ছুড়তে সড়ক বিভাজক ভেঙে টুকরো টুকরো করেছিলো হেফাজতকর্মীরা, রাস্তায় তাই পড়ে ছিলো অসংখ্য ইট। সড়ক বিভাজকের প্রায় সব গাছ ভেঙে ফেলা হয়।

এর আগে রোববার দুপুরে পুরানা পল্টন এবং বিজয়নগর এলাকায় চলে হেফাজতের তাণ্ডব। পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতের প্রায় সব দোকানই পুড়িয়ে দেয়া হয়।

সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ছাই হয়ে যাওয়া বইয়ের স্তূপ।

রোববার গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর ছেড়ে যাওয়ার পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাস্তায় থেকে সরানো শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ।

বুলডোজার ব্যবহার করে রাস্তার আবর্জনা সরানো হয়।আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তত ৩০টি বিভিন্ন ধরনের ময়লা বহনকারী গাড়ী ব্যবহার করা হয়।

রাত পৌনে ৩টার দিকে দৈনিক বাংলার দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান।তখন হেফাজতের সমাবেশ মঞ্চ থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়।

এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় মাইক। ১০ মিনিটের মধ্যেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শাপলা চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

শাপলা চত্বর নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিভিন্ন গলি পথে থাকা হেফাজতকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে র‌্যাব-পুলিশ। ইত্তেফাক, মধুমিতা হলের গলি, মতিঝিল থেকে ইত্তেফাকের দিকে ডান পাশের প্রথম গলিতে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় হেফাজতকর্মীরা।

এদিকে, শাপলা  চত্বরে অভিযানের সময় কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে সোনালী ব্যাংকের প্রধান দপ্তরে ঢুকে পড়ে কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী।

রাত সাড়ে ৩টার পর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে। ওই ভবনের পশ্চিম পাশে সীমানা প্রাচীরের ভেতরেও কয়েকশ’ হেফাজত কর্মী অবস্থান ছিলো।তাদের বের করে প্রথমে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। পরে তাদের চলে যেতে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নটরডেম কলেজ ও কমলাপুরের দিকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ কান ধরে, কেউ হাত উঁচু করে পালিয়ে য়ায় তারা। ভোর ৫টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে এভাবে হেফাজতকর্মীদের বের করা হয়। এর মধ্যে গলিপথ ও ইত্তেফাকের দিকটাও নিয়ন্ত্রণে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।