১০০ ঘণ্টা পর পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার

সাভারে ভবন ধসের একশ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা চলছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2013, 00:09 AM
Updated : 28 April 2013, 08:10 AM

রোববার সকালেও রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তৃতীয় তলায় নয়জনকে এবং অন্য একটি অংশে সাত জনকে জীবিত পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে পাঁচজনকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।  

সাভার পুলিশের পরিদর্শক আমিনুর রহামন জানান, উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ জনে। এর মধ্যে ৩২০ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর ৫৬টি মরদেহ ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

আমিনুর রহামন বিকালে ৩৯৭ জনের লাশ উদ্ধারের খবর দিলেও পরে বলেন, তাদের হিসাবে কিছু গড়মিল হয়েছিল।

উদ্ধার অভিযানের পঞ্চম দিনে এসে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী।

তিনি বলেন, “আমরা এ কয় দিন ভেতরে আটকে পড়া জীবিতদের নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছি। কাজের প্রথম স্তরেই থেকেছি। কিন্তু কাজের এই পর্যায়ে এসে ম্যানুয়ালি উদ্ধার প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা তাই ম্যানুয়ালি উদ্ধারের সাথে সাথে কিছু প্রযুক্তির সহায়তা নিতে চাচ্ছি।”

তৃতীয় তলায় পাওয়া জীবিতদের উদ্ধার করা হলেই ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান জানান, তৃতীয় তলা থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগতে পারে।

পুলিশ রানা প্লাজার আশপাশে বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে, যাতে উৎসুকরা ভেতরে ঢুকতে না পারে।  বহু স্বজন লাশের খোঁজে পুলিশের ব্যারিকেডের বাইরে অপেক্ষায় আছেন।

এর আগে সকালই রানা প্লাজার ধ্বংস্তূপের আশপাশ থেকে উদ্ধারকর্মী ছাড়া সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়। হাইড্রলিক ক্রেন, ডোজার ও  লোডারের মতো ভারী সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয় ভবনের সামনের অংশে।

সেনাবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সিদ্দিকুল আলম শিকদার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, জীবিতদের উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

“যতক্ষণ একজনকেও জীবিত পাওয়া যাবে, ততোক্ষণ উদ্ধার কাজ চলবে।”

শনিবার দুপুরে ও রাতে বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যেও জীবিতদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান উদ্ধারকর্মীরা। দিনভর চেষ্টায়  মোট ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযানের চার দিনে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ২ হাজার ৪৩৩ জনকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন। 

ধসে পড়ার সময় রানা প্লাজার পাঁচটি পোশাক কারখানাসহ ভবনে কত মানুষ ছিলেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি।

ধসে পড়া ভবনের সামনে একটি তথ্য কেন্দ্র রয়েছে, সেখান থেকে সর্বশেষ তথ্য দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া প্রায় দেড় কিলোমিটার  দূরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রয়েছে আরেকটি তথ্য কেন্দ্র। লাশ উদ্ধারের পর সেখানে রাখা হয়, আহতদের নেয়া হয় হাসপাতালে।

অধর চন্দ্র বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আমিনুর রহমান রোববার সকালে জানান, স্বজনদের কাছ থেকে যে তথ্য তারা পেয়েছেন, সে অনুযায়ী এখনো ১ হাজার ১৬৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

গত বুধবার ধসে পড়ে সাভার বাসস্ট্যান্ডের নয় তলা ভবন রানা প্লাজা। প্রথমে স্থানীয়রা ধ্বংস্তূপে উদ্ধার অভিযান শুরু করে, পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

৫৬ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত নয় তলা ওই ভবন ধসে পড়ে এখন তিন তলার উচ্চতা নিয়ে আছে। আর কনক্রিট কেটে গর্ত তৈরি করে ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মী দল।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানান, ধসে পড়া ভবনের বিভিন্ন অংশে সাতটি গর্তে (হোল) বিশেষ ক্যামেরা দিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই রকম ২৫টি গর্ত তৈরি করা হয়েছে।

সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল।

ছয় তলার অনুমতি নিয়ে নয় তলা করা এ ভবনে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড নামে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল।

এর মধ্যে রানা, তিন কারখানা মালিক এবং সাভার পৌরসভার দুই প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।