“ডোবা বা খালের ওপর বিল্ডিং করলে ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে, তা যতো মজবুত করে করা হোক না কেন।
“তাদের (দালান মালিক) ভাবা উচিত যে, জলাভূমির নিচেও পানির স্তর আছে। যতোই পাইলিং করা হোক, ভূমিকম্প হলে, নড়াচড়া হলে দালানের ক্ষতি হবেই।”
বুধবার সাভারের রানা প্লাজা এবং ২০০৫ সালে একই এলাকায় ধসে পড়া স্পেকট্রাম গার্মেন্ট ডোবার ওপর তৈরি করা হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
মৃদু ভূমিকম্প হলেও পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনসহ দালানের কাঠামো পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়র শুরুতেই প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রায় ২০ মিনিট সাভারের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
ধসে পড়া ভবনে চলমান উদ্ধার কাজ নিয়ে তিনি বলেন, “তাড়াহুড়ো করতে গেলে ক্ষতি হবে। তাড়াহুড়ো করার উপায় নেই। তাহলে এখানো যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচানো যাবে না। মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে থাকায় ‘ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে’ উদ্ধার কাজ শুরু হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উদ্ধার কাজের শ্লথ গতি নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঢাকায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার করার কেউ থাকবে না। কারণ, কেউ তো নিয়ম মেনে বাড়ি করেন নাই। যারা এখন সমালোচনা করছেন, তারাও এতটুকু জায়গা ছাড়েন নাই যে, কিছু হলে ফায়ার ব্রিগেড গিয়ে উদ্ধার কাজ চালাতে পারে।”
সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অন্তত একটি মানুষকে উদ্ধার করেন। উপস্থিত থেকে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। বুঝবেন কেন সময় লাগে।”
সাভারের রানা প্লাজায় ধসের ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করে এখনো যারা জীবিত আছেন তাদের উদ্ধারের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যারা চাপা পড়ে আছে- তাদের উদ্ধার করতে হবে, বাঁচাতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না, যাতে যারা বেঁচে আছে- তাদের কিছু হয়।”
টেলিভিশনের টক শো’তে শ্রমিক নেতাদের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বলতে খারাপই লাগে- শ্রমিকরা ওখানে পড়ে আছে। আর শ্রমিক নেতারা টক শোতে ব্যস্ত। শ্রমিক নেতাদের তো দুর্ঘটনাস্থলে থাকার কথা, তাদের তো টক শোতে থাকার কথা না।”
বুধবার রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে স্থাপত্যবিদরা ‘বিল্ডিং কোড’ মেনে সব দালান করা হয়েছে কি না তা অতিদ্রুত যাচাইয়ের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা রানাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান।
“অনেকে বলছেন, এখনি যাচাই করা দরকার- বিল্ডিং কোড মেনে দালান করা হয়েছে কি না? আমি তো জানি বাংলাদেশের নাইন্টি পারসেন্ট বিল্ডিং ‘বিল্ডিং কোড’ মেনে করা হয় না। তা হলে সবই ডেমেলিশ করে দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, ধসে পড়া ভবন থেকে এখন পর্যন্ত দেড় হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই শোক আসলে কোনো মানুষের পক্ষ সহ্য করা সম্ভব না। গবীর মানুষগুলো এসেছিল- ভাগ্যের পরিবর্তনে।”
“দুঃখজনক হলো, পরশু (মঙ্গলবার) ফাটল দেখা দেয়। সিদ্ধান্ত হয়, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ এসে দেখবে। কিন্তু কাল (বুধবার) আবার শ্রমিক ঢোকানো হয়। তখনই ভবনটি ধসে পড়ে।”
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উদ্ধার কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
“একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা সেখানে বসেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”
বিরোধীদল বুধবার হরতাল প্রত্যাহার করায় আবারো তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই ঘটনায় সবার সহযোগিতা চান সরকার প্রধান।