টানাহেচড়ায় ভবন ধস, অটল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর আবারো বলেছেন, হরতাল সমর্থকদের ফটক আর স্তম্ভ ধরে 'টানাহেচড়ায়' সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়তে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2013, 02:04 AM
Updated : 3 May 2013, 00:37 AM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তথাকথিত হরতাল সমর্থক লোকজন কারখানা বন্ধ করার জন্য ফাটল ধরা স্তম্ভ নিয়ে টানাহেচড়া করেন।"

এর ফলে ধস হয়েছে কিনা বা ধস তরান্বিত হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখতে হবে বলে তিনি জানান।

বুধবার বিবিসিকে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক সাক্ষাতকারে এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জের ধরে সাংবাদিকরা প্রেস ব্রিফিংয়ে এ প্রশ্ন তোলেন।

File Photo

বিবিসিকে দেয়া ওই সাক্ষাতকারে ভবন ধসের জন্য স্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

"এখানকার মৌলবাদী... বিএনপি... এদের হরতালের জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল। আমাকে বলা হয়েছে, হরতাল-সমর্থক কতিপয় ভাড়াটে লোক সেখানে গিয়ে ওই যে ভাঙা দালান ছিল বা ফাটল ধরা দালান ছিল, সেই দালানের বিভিন্ন স্তম্ভ নিয়ে নাড়াচাড়া করে এবং যে গেট বা দরজা ছিল, সেটা নিয়েও নাড়াচাড়া করে। এটাও এ ধরনের একটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।"
ভবন ধরে নাড়াচাড়া করার কারণেই ভবনটি ধসে পড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, "ভবন সম্পর্কে মনে রাখা দরকার, যখন একটি ভবন ধসে পড়া শুরু হয়, তখন তার একটি অংশ বা খানিকটা অংশ ধসে পড়লে বাকি অংশের ওপরও এর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সে ধরনের প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হতে পারে।"

বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর গণমাধ্যম ও ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

মঙ্গলবার ফাটল ধরার পর সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ খোলা রাখেন এর মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। ভবনটিতে অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতেও জোর করে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

ঝুকিপূর্ণ ভবনটি বুধবার সকালে ধসে পড়ে, যখন এর বিভিন্ন তলায় পাঁচটি পোশাক কারখানায় প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় ১৭৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে এক হাজারের বেশি শ্রমিক।

বিরোধীদলের হরতাল প্রতিহত করার জন্য স্থানীয় যুবলীগকর্মীরা সোহেলের নেতৃত্বে এ ভবনে জড়ো হতেন। ভবন ধসের সময় সোহেল ঘটনাস্থলে ছিলেন যাকে 'জনরোষ' থেকে রক্ষা করতে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ।

ভবন ধসে পড়া নিয়ে 'টানাহেচড়ার' প্রসঙ্গটি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বারংবার প্রশ্নের জবাবে মহীউদ্দীন খান আলমগীরও বার বার জোর দিয়ে বলেন, হরতাল সমর্থক লোকজন কারখানা বন্ধ করার জন্য ফাটল ধরা স্তম্ভ নিয়ে টানাহেচড়া ধসে পড়ার একটি কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন, যা তদন্ত করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মন্ত্রী বলেন, ভবন ধসের জন্য যারা দায়ী তারা যে দলের, যে গোষ্ঠীর বা যারই আত্মীয় হোক না কেন কাউকেউই ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

“প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।”