মঙ্গলবার ফাটল ধরার পর শিল্প পুলিশের নিষেধ সত্বেও বুধবার সকালে ওই ভবনে চারটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ এসেছে। সকাল সাড়ে ৮টার ভবনটি ধসে পড়লে অন্তত ৮৫ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ মানুষ।
বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মঙ্গলবার ফাটল ধরার পরপরই বিজিএমইএর একটি পরিদর্শক দল শিল্প পুলিশের সঙ্গে ভবনটি ঘুরে দেখে। পরে ভবনের মালিককে বলা হয় যাতে বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে পরীক্ষা করা পর্যন্ত ভবনটি বন্ধ রাখা হয়।”
ভবন মালিক সোহেল রানা পরিদর্শক দলকে ভবন বন্ধ রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও পরে তা তিনি মানেননি বলে উল্লেখ করেন আতিকুল ইসলাম।
হতাহতের এই ঘটনায় সোহেল রানাকে দায়ী করে তিনি বলেন, “তার সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য বিজিএমইএ সুপারিশ করবে।”
মঙ্গলবার ভবনটিতে ফাটল ধরার পর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ভবনটি ঘুরে দেখেন।
স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে ভবন মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সামান্য একটু প্লাস্টার খুলে পড়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।
ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল।
আর তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেক্সটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন বলে স্থানীয়রা জানান।
ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবারই ওই শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের সব কর্মকর্তা কর্মচারীই নিরাপদে আছেন।
রানা প্লাজার চারটি পোশাক কারখানা মঙ্গলবার বন্ধ রাখা হলেও বুধবার সকালে আবার কাজ শুরু হয়।
শিল্প পুলিশের পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল যখন ফাটল দেখা গেল তখনই শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যেন কারখানা বন্ধ রাখা হয়। আমরা বলেছিলাম, বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে পরীক্ষা করার পর কারখানা খোলা যাবে কি না জানানো হবে।”
“কিন্তু শিল্প পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করে মালিকদের একক সিদ্ধান্তে বুধবার সকালে তারা কারখানা খুলে দেয়।”
সকালে ভবন ধসের পরপরই শ্রমিকদের স্বজনেরা রানা প্লাজা এলাকায় ভিড় করেন এবং অনেকেই ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অনেক শ্রমিকও জানান, সকালে ফাটল ধরা ভবনে কাজে যোগ দিতে তাদের বাধ্য করা হয়।
সাভারের এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, “আমরা কেউ ভবনে ঢুকতে চাচ্ছিলাম না। বসরা আমাদের লাঠি নিয়ে তাড়া করেন। পরে বাধ্য হয়ে আমরা কারখানায় যাই।”
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ঠিক উপাদানও ব্যবহার করা হয়নি।
“তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমরা এটি উদঘাটন করব। দোষীদের আইনি ব্যবস্থায় আনবো”, বলেন মন্ত্রী।
ভবন মালিককে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমার মাথায় আছে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”