‘শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকানো হয় জোর করে’

পোশাক শ্রমিকদের জোর করে রানা প্লাজার বিভিন্ন কারখানায় ঢোকানো হয় বলে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।

সেলিম আহমেদও আহমেদ সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2013, 02:31 AM
Updated : 24 April 2013, 12:28 PM

আগের দিন ভবনে ফাটল দেখার পরেও বুধবার সকালে নয়তলা ওই ভবনের চারটি ফ্লোরে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু হয়।

ভবনের তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড, চতুর্থ তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেক্সটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

কারখানায় কাজ শুরুর কিছু সময় পর সকাল ৯টার কিছুক্ষণ আগে ভবনটি ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে বহু লোক হতাহত হন।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই ভবনের পঞ্চম তলার ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড কারখানার কর্মী আকলিমা।

তিনি বলেন, “আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় আমরা কারখানায় যেতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু সকালে কারখানার অফিসাররা আমাদের জোর করে কারখানায় ঢোকায়।”

ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে তার ছোট বোন সৌদিয়া মারা গেছেন বলে জানান আকলিমা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “আমরা কেউ ভবনে ঢুকতে চাচ্ছিলাম না। বসরা আমাদের লাঠি নিয়ে তাড়া করেন। পরে বাধ্য হয়ে আমরা কারখানায় যাই।”

সকাল ৯টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়। তারপরে ভবনটি ধসে পড়ে।

ধসের সময় ভবনের পঞ্চম তলায় দুই শতাধিক মানুষ ছিল বলে জানান তিনি।

ভবনের চারতলায় ফ্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেডে কাজ করতেন নাজমা আক্তার। দুর্ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পরেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি।

নাজমাকে খুঁজতে এসে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আহাজারি করছিলেন তার স্বামী রানা।

তিনি বলেন, কারখানার পাশেই তাদের বাসা। কাজে যোগ দেয়ার জন্য সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন তার স্ত্রী।

“দুর্ঘটনার খবর শুনেই ছুটে আসি। কিন্তু এখনো ওর কোনো খোঁজ পেলাম না।”

এদিকে, আহতদের সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের।

চিকিৎসকদের পাশাপাশি তাদের শিক্ষার্থীরাও আহতদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন।

এই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল বলেন, “আহতদের স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না। এজন্য অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।”

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সাড়ে সাতশ’ শয্যার এই হাসপাতালে আর কোনো শয্যা খালি নেই। মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে অনেককে। আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছে আহতদের উপড়ে পড়া ভিড়।

ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ২৫ জন শিক্ষকের একটি দল এনাম মেডিকেলে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এই চিকিৎসকদের দলের সদস্য অধ্যাপক আব্দুল গনি মোল্লা জানান, তারা দুইটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছেন। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।