আন্দালিবের বক্তব্যে ‘সোস্যাল মিডিয়ায়’ সমালোচনার ঝড়

গ্রেপ্তার চার ব্লগারকে ‘কান ধরে বসিয়ে রাখার’ কথা বলায় বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের সমালোচনায় সরব সোস্যাল মিডিয়া।

বৃহস্পতিবার রাতে চ্যানেল আইয়ে ‘তৃতীয় মাত্রা’ নামে একটি টকশোতে গণজাগরণ মঞ্চ ও ব্লগারদের নিয়ে ‘তীর্যক’ মন্তব্য করেন আন্দালিব, যদিও তিনি বরাবরই দাবি করে আসছেন শাহবাগের চেতনার সঙ্গে তার কোনো দ্বিমত নেই।

আলোচনার এক পর্যায়ে ব্লগারদের গ্রেপ্তারের পর মিডিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখার প্রসঙ্গ টেনে আন্দালিব বলেন, “অনেকেই বলছেন, ওদেরকে যেভাবে ধরা হচ্ছে, দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ওরা জঙ্গি। … জঙ্গি! ওদের তো কান ধরে বসায় রাখার দরকার ছিল, নাকে খত দেওয়া দরকার ছিল। তারা কী এক্সপেক্ট করেছিল, তাদের হাতে রজনীগন্ধা স্টিক দেওয়া হবে।”

অনুষ্ঠানে অপর আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।

তিনি আন্দালিবের এমন মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কথা বলতে চাইলেও তাকে থামিয়ে দিয়ে আবারো বলতে শুরু করেন বিজেপি চেয়ারম্যান।

বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর তার আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন আন্দালিব। পরে দলের চেয়ারম্যানও হন।

হেফাজত ইসলাম নামের একটি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষাপটে গত ১ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিন ব্লগার শুভ, বিপ্লব ও পারভেজকে। এর দুই দিনের মাথায় ৩ এপ্রিল সকালে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অপর ব্লগার আসিফকে।

ইন্টারনেটে কথিত ‘ধর্মীয় উস্কানিমূলক’ লেখালেখির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও আটকের পর দুই সপ্তাহ পর বুধবার তথ্য প্রযুক্তি আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নাস্তিকের মঞ্চ’ আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আন্দালিব আরো বলেন, “কীভাবে একজন মুসলমান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে এই চারটা ছেলে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা নিয়মিত ব্লগ লিখতো তাদের কেন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে, আমরা এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

“সেখানে বলা হচ্ছে যে তারা হযরত মুহাম্মদকে (স.) নিয়ে বাজে কথা বলছে। তার মানে আমার বিরোধী দলীয় নেত্রী যে বলেছে এটা নাস্তিকের মঞ্চ, শি ইজ রাইট।”

আন্দালিবের ওই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ শুরু হয় সোস্যাল মিডিয়ায়। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে ফোন করে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ব্লগারদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্লগার অমি রহমান পিয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে (পার্থ) যা বলে তা বাজারের কথা। সে সব সময় যুক্তিসঙ্গত কথা বলে না।”

অমি রহমান বলেন, যে চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে আসিফ মহীউদ্দিন ছাড়া কারোর লেখায় ধর্ম অবমাননা হতে পারে এমন কিছু ছিল বলে তিনি মনে করেন না।

“শুধু আসিফ মহীউদ্দিনের জন্য গোটা ব্লগার কমিউনিটি একরকম হয়ে যাবে এমন তো হতে পারে না।”

গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার ব্লগারদের ধর্ম অবমাননাকারী বা দেশদ্রোহী হিসাবে উল্লেখ করার বিষয়টিকে ‘বাজে চর্চা’ হিসাবে উল্লেখ করেন তিনি।

টকশোতে ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার প্রসঙ্গে জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সাংসদ আন্দালিব রহমান পার্থের সঙ্গে।

তিনি দাবি করেন, তিনি ব্লগারদের বিরুদ্ধে নয়, বরং নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আর ফেইসবুকের ওই ভিডিও ক্লিপটিতে বক্তব্য কাটছাট করে প্রকাশ করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ‘কেউ কেউ’ সমালোচনা করলেও অনেকেই তার অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আন্দালিব বলেন, “যারা ইসলাম বিরোধী কথা বলেছে, আমি তাদের বিরুদ্ধেই বলেছি। ওই অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে তাদের (গ্রেপ্তার তিন ব্লগার) জঙ্গির মতো মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করায় অনেকে সহমর্মিতা জানিয়েছে এমন প্রসঙ্গে কথা উঠলে আমি তার বিরোধিতা করি।”

ব্লগে লেখালিখির মাধ্যমে যারা ‘ইসলামকে অপমান’ করে তাদের জন্য সহমর্মিতার কোনো জায়গা নেই বলেও মন্তব্য করেন আন্দালিব।

গ্রেপ্তার ব্লগারদের ব্লগ পড়েছেন কিনা- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “তারা তো নিজের মুখেই স্বীকার করেছে তারা ভুল করে লিখেছে, না জেনে লিখেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তা ছাপাও হয়েছে। এরপর তো আর কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না।”

শাহবাগের চেতনা বা দাবির সঙ্গে দ্বিমত নেই দাবি করে আন্দালিব বলেন, “কিন্তু নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমি এখনো শাহবাগকে শ্রদ্ধা করি, ইমরান এইচ সরকার, মারুফ রসুল বা অমি রহমান পিয়াল কারো সাথেই আমার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু নাস্তিক ব্লগারদের ওউন করে তারা ঠিক কাজ করেনি।”