ব্লগারদের মুক্তির জন্য জন কেরিকে চিঠি

ইন্টারনেটে ‘ধর্মীয় উস্কানিমূলক’ লেখালেখির অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে চিঠি দিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2013, 08:40 AM
Updated : 16 April 2013, 11:41 PM

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানবতাবাদী ও মুক্তমনাদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন সেন্টার ফর এনকোয়েরির (সিএফআই) পক্ষ থেকে জন কেরিকে লেখা ওই চিঠিতে অবিলম্বে আটক চার ব্লগারের মুক্তির জন্য তার হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।

প্রয়াত  দার্শনিক  ও লেখক পল কার্জ  প্রতিষ্ঠিত  এই সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ১১ এপ্রিল জন কেরিকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, “সিএফআই ধর্মীয় স্বাধীনতা ও  মুক্তচিন্তার ওপর আগ্রাসন সংক্রান্ত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।”

“ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রাজধানীর রাস্তায় হাজার হাজার উগ্রপন্থী ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মিছিল করেছে ব্লাসফেমি আইন বাস্তবায়ন এবং আরো ব্লগারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে। তারা বলেছে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে তারা আরো বড় ধরনের সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করবে।”

“বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্বলিত আর্টিকেল ১৮ ও ১৯-এর অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এই অঙ্গীকারনামায় দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে ধর্ম, বিশ্বাস ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কেবল নতুন ব্লাসফেমি আইন প্রত্যাখ্যান করাই উচিত নয়, সেই সাথে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনগুলোও বাতিল করা প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে মুক্তমনা লেখকদের হয়রানি বন্ধ করে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

সেন্টার ফর এনকোয়েরি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।

এগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়ন (আইএইচইইউ), এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল (এএআই), কমিটি ফর স্কেপটিকাল এনকোয়েরি, কাউন্সিল ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম, ফ্রি সোসাইটি ইন্সটিটিউট অব সাউথ আফ্রিকা, রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার,  কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ও গ্লোবাল ভয়েস অ্যাডভোকেসি।

ব্লগারদের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দেয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও  দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাই কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে তারা।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তচিন্তা,  মানবতাবাদী ও মুক্তমনাদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়ন ব্লগারদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও তাদের মুক্তি চেয়ে দুটি বিবৃতি দিয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল দেয়া প্রথম বিবৃতিতে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করায় বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তারা। মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে হেঁটে মুক্তমনা লেখকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয় ওই বিবৃতিতে।

এছাড়া বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা ধর্ম অবমনানার অভিযোগ এনে  ব্লগারদের যে তালিকা দিয়েছেন তা গ্রহণ করায় সরকারের সমালোচনা করে সংগঠনটি।

এরপর গত ৯ এপ্রিল দ্বিতীয় বিবৃতিতে বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখকদের ওপর আগ্রাসন প্রতিরোধের  আহবান জানায় তারা।

মুক্তমনাদের আরেকটি  বড় সংগঠন এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল ব্লগারদের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দেয় গত ৪ এপ্রিল। একই দাবি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছেও চিঠি পাঠায় তারা।

রাষ্ট্রদূতকে লেখা চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি কার্লোস ডিয়াজ বলেন, “আমি অনুরোধ করছি, ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তির ব্যাপারে আপনি উদ্যোগী হবেন এবং নিশ্চয়তা দেবেন যে, আপনার দেশের নাগরিক– তা তিনি ধার্মিক হোন আর না হোন, তিনি যেন নির্ভয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারেন।”

ফ্রি সোসাইটি ইন্সটিটিউট অব সাউথ আফ্রিকার পক্ষ থেকে  দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাই কমিশনের কাছে একই ধরনের একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

একই ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে  রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ও গ্লোবাল ভয়েস অ্যাডভোকেসি। বিবৃতিতে ব্লগারদের অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছ তারা।

এর বাইরে ‘ইয়ং এথিস্টস সার্ভাইভাল  গাইড’ ও ‘ফ্রেন্ডলি এথিস্’  ব্লগ সাইটের পরিচালক হেমন্ত মেহতা, নারীবাদী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন, ইরানি বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মরিয়ম নামাজীসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কয়েকজন লেখকও ব্লগারদের মুক্তি দাবি করেছেন।

হেফাজত ইসলাম নামের একটি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষাপটে গত ১ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর দুই দিনের মাথায় ৩ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।