ফটিকছড়িতে হরতালবিরোধী মিছিলে হামলা, নিহত ৩

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিনজন।

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2013, 08:43 AM
Updated : 11 April 2013, 12:38 PM

হরতালের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলার পর এই সংঘর্ষ বাঁধে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত তিনজনকেই দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছেন গত সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, যার নেতৃত্বে ওই মিছিলটি বের হয়।

সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় দুই জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহতদের মধ্যে ২৯ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে রাতে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়।

পেয়ারুল জানান, ঘটনাস্থলে নিহত লোকমান ও জামাল ভুজপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী। আর হাসপাতালে মারা যাওয়া ফারুক ইকবাল স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী।

সংগঠনের সভাপতি দেলওয়ার হুসেনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে হরতাল ডাকে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। 

হরতালে চট্টগ্রাম নগরীর চিত্র।

এছাড়া আবদুল্লাহ আল নোমানকে কারাবন্দি করার প্রতিবাদে একইদিন চট্টগ্রামে হরতাল ডাকে বিএনপি।

হরতালের বিরোধিতা করে দুপুরে ফটিকছড়ি থানার আজাদী বাজার থেকে পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়।

স্থানীয়রা জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার ভুজপুর থানার কাজীর হাটে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিছিলে হামলা করেন হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতের কর্মীরা।

হামলায় পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। হামলাকারীরা ১৫টি মোটর সাইকেল ও দুটি জিপ পুড়িয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়িতে আগুন নেভাতে গিয়ে তিন দমকলকর্মী হামলার শিকার হন। তারা দমকল বাহিনীর একটি গাড়িও ভাংচুর করে।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণের উপ-সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগুন নেভাতে তাদের দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় গাড়ি দুটিতে আগুন দেয়া হয়। এতে তিনজন দমকলকর্মী আহত হন।

হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি আফম নিজাম উদ্দিন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হরতালবিরোধী মিছিলটি ভুজপুর থানা সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় কাজীর হাট বড় মাদ্রাসার মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় যে, সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসায় হামলা করতে এসেছে।”

ঘোষণার পরপরই জামায়াত ও হেফাজতকর্মীরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জড়ো করে মিছিলকারীদের ওপর ইট ছুড়তে শুরু করে।

এরপর লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা হয় বলে জানায় পুলিশ।

হামলায় নিজাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় ভুজপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আহতদের মধ্যে ২৯ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর মধ্যে ফারুক ইকবাল বিপুল (৪০) মারা যান বলে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির হাবিলদার পঙ্কজ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জানে আলম মেম্বার (৩৫), বদিউর রহমান (৪৫), মোহাম্মদ বাবর (২২), আবুল কাশেম (৩৫), মনসুর উদ্দিন বাবুল (১৮), আক্তার মেম্বার (৩৪), মো. হান্নান (২১), জাফর আহমদ চৌধুরী (৩৫), মো. সরওয়ার (৩৪) , মো. সাহাবুদ্দিন (৩২), মো. সেলিম (২২), মো. আলাউদ্দিন (২৫), মাহমুদুল হক চেয়ারম্যান (৪৫), জসিম উদ্দিন (২৫), মো. রুবেল (৩০) ও জাহেদ উল্লাহ (২৮)।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মো. বাশার জানান, এদের মধ্যে বাবরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ফটিকছড়ি থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকশ রাউন্ড রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

বিকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান তিনি।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজীরহাটে ১৪৪ জারি করা হয়েছে। এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।