হেফাজতকে বিএনপির সমর্থন

‘নাস্তিক ব্লগারদের’ শাস্তি দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সব দাবি ও কর্মসূচির প্রতি ‘নৈতিক’ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2013, 06:29 AM
Updated : 2 April 2013, 11:54 AM

মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সমর্থনের কথা জানান।

আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লং মার্চের কর্মসূচি রয়েছে হেফাজতের, যারা জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট বলে ইসলামী কয়েকটি দল বলছে।

“বেশ কিছুদিন ধরে কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট ব্লগার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ পন্থায় আঘাত করেছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি মারাত্মক হুমকি।

“দেশের আলেম-উলামা-পীর-মাশায়েকবৃন্দ এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। তারা ওইসব ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আমরা ১৮ দলীয় জোট তাদের ওইসব ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি পূর্ণ নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।”

হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচিকে সমর্থন জানাচ্ছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “আগেই বলেছি, তাদের দাবি ও কর্মসূচির প্রতি আমরা পূর্ণ নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর মাঠে নামে হেফাজত। চট্টগ্রামভিত্তিক এই সংগঠনটির নেতা হাটহাজারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ শফী।

শাহবাগের আন্দোলনকারী ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিরোধের ডাক দেন আহমদ শফী।

চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ ডাকা হলে সেদিন হরতাল ডাকেন তিনি, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করলে সমাবেশ স্থগিত করে গণজাগরণ মঞ্চ।

হেফাজতের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও গণজাগরণ আন্দোলনকে ‘নাস্তিকদের’ আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেন।

ইসলাম ও মহানবীতে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে হেফাজতকে লংমার্চের কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

তবে আহমদ শফী সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে রোববার বলেছেন, দুই তিন হাজার আলেমকে দাওয়াত করে কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। তাই এটা স্থগিত করতে পারবেন না।

লংমার্চে বাধা দিলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকিও দেন তিনি।

হেফাজত দাবি তোলার পর সরকার ব্লগ পর্যবেক্ষণে একটি কমিটি করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজন ব্লগারকে।

গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা পথভ্রষ্ট প্রধান ব্লগার কি না, জানি না। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে এই আইওয়াশ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না।”

বিএনপির মুখপাত্র আরো বলেন, “আমরা এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে চাই না। দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন কেউ আঘাত না করে, তা নিশ্চিত করতে চাই।

“কিন্তু সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে দেশে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, আমরা এর নিন্দা জানাই।”

বিকল্পধারার সমর্থন

হেফাজতে ইসলামের লং মার্চের কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার দলের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক বিবৃতিতে এই সমর্থনের কথা জানান।

তিনি বলেন, “ইসলামের প্রিয় রাসুল (সা.) এর অবমননাকারীদের ৬ সপ্তাহ পরও গ্রেপ্তার না করায় দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ অপমানিত বোধ করছে। হেফাজতে ইসলাম এ ব্যাপারে যে কর্মসূচি দিয়েছে, তাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে।

“দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবং যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সমর্থিত হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচির প্রতি বিকল্পধারা পূর্ণ সমর্থন দান করছে।”