ইমরানের ৬ প্রশ্ন

তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তার এবং ব্লগ নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2013, 05:33 AM
Updated : 2 April 2013, 01:07 PM

ব্লগারদের ওপর সরকার ‘খড়গহস্ত’ হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছে ছয়টি প্রশ্ন রেখেছেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র।

ইমরান মঙ্গলবার শাহবাগে সাংবাদিকদের বলেন, কথিত ধর্মীয় উস্কানিমূলক লেখালেখির অভিযোগ এনে তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তারের ঘটনা স্বাধীন মত প্রকাশের ওপরে আঘাত।

সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে, বন্ধ হয়ে গেছে ‘আমারব্লগ’।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদই দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি করে এবং এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের নামে মাঠে নামে কয়েকটি ইসলামী দল, যারা মঞ্চের মুখপাত্র ইমরানসহ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে তাদের শাস্তি দাবি করে।

‘নাস্তিক ব্লগারদের’ ফাঁসির দাবিতে হেফাজতের লংমার্চের আগে মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে ব্লগ পর্যবেক্ষণে একটি কমিটি করে সরকার। তারপর সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় তিন ব্লগারকে।

এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান বলেন, “রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করেছে, তা জাতি দেখেছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ঘটনা নজিরবিহীন।

“এভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা কতটা সংবিধান স্বীকৃত, সরকারের কাছে সে প্রশ্ন থাকল।”

সরকারের সমালোচনা করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা যখন কোনো একজন ব্যক্তির লেখার ওপর ভিত্তি করে ব্লগ বন্ধ করে দেয়, তখন তা জাতির জন্য এবং তারুণ্যের জন্য বেদনাদায়ক।”

ব্লগ পর্যবেক্ষণে সরকার গঠিত কমিটির সদস্যদের ইন্টারনেট এবং ব্লগের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই, বলেন তিনি।

সরকারের গঠিত কমিটিতে দুজন আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। তবে কোনো ব্লগারকে এতে রাখা হয়নি।

এসব বিষয়ে রাষ্ট্রের কাছে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন ইমরান।

১. জামায়াত-শিবির চক্র ব্লগে এবং ফেইসবুকে মওদুদীবাদ প্রচারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে নানাভাবে যখন প্রশ্নবিদ্ধ করে, তখন কোথায় থাকে রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞপ্তির ধর্মানুভূতি?

২. যখন জামায়াত জাতীয় মসজিদে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে তখন কী রাষ্ট্রের ধর্মানুভূতি শীতনিদ্রায় থাকে?

৩. যখন চট্রগ্রামে আলেম সমাজকে হত্যার হুমকি দেয় জামায়াত-শিবিরের শ্বাপদরা, তখন কি রাষ্ট্রের অভিধানে ধর্মানুভূতি শব্দটি অনুপস্থিত থাকে?

৪. যখন জামায়াত-শিবির পুলিশের উপরে নির্বিচারে হামলা চালায়, তাদের হত্যা করে, চিকিৎসককে আগুনে পুড়িয়ে মারে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়, রাষ্ট্র তখন কেন তদন্ত কমিশন বানায় না? তখন কি রাষ্ট্র আঘাতপ্রাপ্ত হয় না?

৫. হরতালের নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির যখন দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়, ব্লগের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে যে সব গণমাধ্যম ধর্মীয় অবমাননাকর বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে, তখন রাষ্ট্র কেন কমিশন করে ‍উদ্যোগ নেয় না?

৬. যখন অনলাইন এবং ব্লগে জামায়াত-শিবির বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপপ্রচার চালায়, তখন কেন মহাজোট সরকার তার বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয় না? আজ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার বিরুদ্ধে সরকার কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত নিষিদ্ধে শুক্রবার আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ।

‘আন্দোলন চলবে’

নানা দিক থেকে প্রতিকূলতা এলেও যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে গণজাগরণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান। 

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করে দেয়ার মত আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কারো নির্দেশে নয় বরং জনগণের স্বতঃফূর্ত অংশগ্রহণে এই মঞ্চ তৈরি হয়েছে। কারো নির্দেশে বা কারো রক্তচক্ষু দেখে আন্দোলন বন্ধ হবে না।”

“কে কঠোর আর কে কোমল হল, তাতে কিছু যায় আসে না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে,” বলেন ইমরান।

আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ‘নাস্তিকতার’ অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইমরান বলেন, “ব্লগে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে কি না, তা তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেয়া যেত। কিন্তু তদন্ত না করেই ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে সরকার ঠিক কাজ করেনি।

তারা (ব্লগাররা) আসলেই লিখেছেন কি না, না কি অন্য কেউ তাদের নাম ব্যবহার করেছে, তা-ও তদন্তের আহ্বান জানান তিনি।