‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলেই ব্যবস্থা’

কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সরকার জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2013, 04:24 AM
Updated : 2 April 2013, 12:37 PM

ব্লগারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের দাবির মধ্যে মঙ্গলবার সরকারের দুই মন্ত্রী একথা জানিয়েছেন।

মন্ত্রীদের এই বক্তব্য আসার আগে সোমবার রাতে তিনজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সচিবালয়ে সাংবাদিকের বলেন, কোনো ধর্ম নিয়েই অবমাননা করতে দেয়া হবে না।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, “যারাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।

“ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেইসবুক বা ব্লগে ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর উক্তি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এসময় আইনমন্ত্রী দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে গতকাল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিবাদই দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি করে এবং এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের নামে মাঠে নামে কয়েকটি ইসলামী দল, যারা ব্লগারদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে তাদের শাস্তি দাবি করে।

গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠকরা অভিযোগ করে আসছেন, জামায়াতই পেছন থেকে ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলামী কয়েকটি দলকে মাঠে নামিয়েছে।

দুই মন্ত্রী জানান, পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনকে মানববন্ধন হিসেবে প্রচার চালানোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গিলাফ পরিবর্তনের ওই ছবিকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবিতে কাবা শরিফের ইমামদের ‘মানববন্ধন’ বলে আমার দেশসহ কয়েকটি সংবাদপত্র ছবি প্রকাশ করে।

শাহবাগের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এই সংবাদপত্রগুলো ধারাবাহিক খবর প্রকাশ করে, যা অপপ্রচার বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ।

যেসব পত্রিকা ধর্মীয় উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “গণমাধ্যম বা অন্য যে মাধ্যমই হোক না কেন ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও অবমাননাকার বক্তব্য প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

কাবা শরীফ নিয়ে একটি পত্রিকায় মিথ্যা প্রচারের বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকারী ব্লগারদের খুঁজে বের করার জন্য কমিটিতে দুজন আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ওই কমিটিতে কোনো ব্লগার বা অন্য কোনো ধর্মের প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি কেন- জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে যান মন্ত্রীরা।

আইনমন্ত্রী জানান, সাইবার অপরাধের বিচার করার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। ঢাকায় একজন বিচারককেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ধর্মীয় অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি বাড়ানোর জন্য দণ্ডবিধির ২৯৭ ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

ওই ধারায় বর্তমানে সরোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা আছে।