জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনের একশ’ ঘণ্টা পেরোনোর পর শনিবার রাত আড়াইটায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ চেয়ে একটি খোলা চিঠি পাঠায় শহীদ রুমি স্কোয়াড। ইন্টারনেটে ইমেইলে চিঠিটি পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।
চিঠিতে বলা হয়, ৪২ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছাই বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের মূল উৎপাটন করতে পারে।
কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের দেয়া ২৬ মার্চের সময়সীমা পার হওয়ার পরেও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে নীরবতা সেই আস্থায় কিছুটা হলেও চিড় ধরিয়েছে।
‘আস্থার এই জায়গাটি নড়ে যাওয়াতেই গত ১০০ ঘণ্টা যাবৎ আমরণ অনশনে আছি আমরা বিশ তরুণ।”
“আপনি চাইলেই যে কোনো বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে জামাত-শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সম্ভব। আপনি চাইলেই আপনার সামনে খুলে যাবে অনেকগুলো রাস্তা; যার যে কোনো একটিতে গেলেই অর্জিত হবে বিজয়। আপনি চাইলেই সকল বাধা বিপত্তি এড়িয়ে আইনগতভাবে, সাংবিধানিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে অথবা স্রেফ গনতান্ত্রিকভাবেই এটি সম্ভব,” বলা হয় খোলা চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, “দেশের তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে আজ শুরু হয়েছে গণজাগরণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ পুরো জাতি একত্রিত হয়েছে।
“যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের কালো হাত গুড়িয়ে দেয়ার জন্য সবাই আজ রাজপথে নেমেছে।”
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে এই নবজাগরণের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধু-কন্যা হিসেবে দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের লালিত স্বপ্ন দেশ ও জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার গুরুভার আজ আপনার উপর। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আপনার কাছে আমাদের দাবি দেশের উপর থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী অশুভ ছায়াকে চিরতরে মুছে ফেলার।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে হিটলারের নাৎসি পার্টির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে চিঠিতে বলা হয়, “আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে একই উপায়ে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে আরেকটি উদাহরণ তৈরি করবে।”
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনশনকারীরা। অবিলম্বে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও সুষ্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের চিঠিতে।
জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২৬ মার্চ থেকে শাহবাগে অনশন করছেন শহীদ রুমী স্কোয়াডের সদস্যরা। টানা পাঁচ দিন অনশনের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শনিবার তাদের ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের পাঁচ জন সকালে আবারো শাহবাগের অনশনস্থলে ফিরে গেছেন।
ইতোমধ্যে শতাধিক সংগঠন তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে।
শহীদ রুমি স্কোয়াডের চলমান এ অনশনে রোববার যোগ দিয়েছেন আরো দুই জন। এরা হলেন বসন্ত ঘোষ এবং নজিউর তানভির। এ নিয়ে অনশনকারীর সংখ্যা দাড়ালো মোট ২২ জন।
স্কোয়াডের মুখপাত্র সেঁজুতী সোনিমা নদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় পাঁচ জন এবং রাতে আরো ২ জন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পরেন। তাদের বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে তাদের ছয়জন রোববার অনশন মঞ্চে পুনরায় যোগ দিয়েছেন।”
শুভ মাহমুদ জ্যোতি নামে একজন এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।