‘জামায়াত নিষিদ্ধে দ্বিধায় সরকার’

সরকারের ‘দ্বিধান্বিত’ অবস্থানের কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিমত এসেছে একটি সংলাপে অংশ নেয়া আলোচক ও দর্শকদের কাছ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2013, 09:46 AM
Updated : 30 March 2013, 08:43 PM

অবশ্য সংলাপে অংশ নেয়া সরকারের একজন মন্ত্রী এ বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলা একাডেমী মিলনায়তনে বিবিসি বাংলা এ সংলাপের আয়োজন করে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান সংলাপে অংশ নেন।

গণজাগরণ মঞ্চের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের এই দ্বিধা কেন?

নাহিদ রহমান উর্মি নামে এক দর্শকের এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সরকার আসলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে চায় না।”

এই না চাওয়ার পিছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “সরকারের সাথে জামায়াতের এ রকম একটা সমঝোতা হয়েছে যে জামায়াতের সবাইকে যাবজ্জীবন দেবে।”

আর আদালতের রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনও সরকারের ‘পরিকল্পনার অংশ’ এমন ইঙ্গিত করেন নোমান।

তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের মাত্র ২০ ভাগ আবেগী তরুণ আছেন। বাকি যারা তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক রংধারী।”

আর মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে কটূক্তি করার ফলে ধর্মপ্রাণ তরুণদের আবেগের কাছে তাদের (গণজাগরণ মঞ্চের) সেই আবেগ ভেসে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা নোমান।

জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারের একটা ‘দ্বৈত ভূমিকা’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে- এমন অভিমত দিয়ে প্যানেল আলোচক আ ন ম মুনিরুজ্জামান বলেন, “জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারের মধ্যে অবশ্যই দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। সরকার নিজে এটা না করে আদালতকে দিয়ে করাবে যাতে করে তাদের একটা দরজা খোলা থাকে।”

অতীতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই ‘ভোটের রাজনীতিতে’ একইভাবে জামায়াতকে ব্যবহার করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শকদের মতামত জানতে চাওয়া হলে তাদের অধিকাংশই জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকারের ‘অস্পষ্ট অবস্থানের’ সমালোচনা করে বলেন, এ বিষয়ে সরকারের মধ্যে ‘অবশ্যই দ্বিধা কাজ করছে’।

এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারের ‘দ্বিধার’ প্রশ্নকে উড়িয়ে দিয়ে ফারুক খান বলেন, “সরকারের কোনো ব্যাপারেই কোনো দ্বিধা নেই।”

সরকার কখনোই তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আইনগত দিকগুলো সরকার খতিয়ে দেখছে।”   

এ বিষয়ে সুলতানা কামাল বলেন, “৭১ এ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে জামায়াতের যে ভূমিকা তাতে করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরকম সংগঠন যেভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে সেভাবেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হাজারটা আইন তৈরি আছে।”

“এর জন্য খুব বড় কোনো আইনের দরকার হয় না।”

এদিকে রাজনৈতিক বিবাদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর  সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হওয়া কী গণতন্ত্র চর্চার দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করে?

এমন এক প্রশ্নের জবাবে সব প্যানেল আলোচক এবং দর্শক সহমত প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হওয়া গণতন্ত্র চর্চার দেউলিয়াত্বই প্রকাশ করে।

এছাড়া সংলাপে নাশকতাকারীদের দমনে দেখামাত্র গুলি করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে কি না, হল-মার্কের অর্থ কেলেঙ্কারির পরেও ওই প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঋণ দিলে তা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে কি না এসব ব্যাপারে আলোচনা হয়।

বিবিসি বাংলা এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যকশনের যৌথ আয়োজনে সংলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক আকবর হোসেন।