তালগোল পাকালেন প্রসিকিউটর

মো. কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলায় প্রসিকিউটর এ কে এম সাইফুল ইসলামের কার্যক্রমে স্পষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2013, 07:29 AM
Updated : 25 March 2013, 08:23 AM

জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার ছিল প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দ্বিতীয় দিন।

সাইফুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় অসংলগ্নতা ধরা পড়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের চোখে।

শুনানি শুরুর কিছুক্ষণ পরই ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান প্রসিকিউটরকে বলেন, “আপনার প্রস্তুতি নেই, যদিও আপনাকে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে।”

“আপনি আজ কাজ করবেন, নাকি ঘুমাবেন, সেটা ঠিক করুন,” বলেন বিচারক।  

তখন প্রসিকিউটর সাইফুল আমতা আমতা করে বলেন, “রাতে বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। কম্পিউটারে যে ডাটা তৈরি ছিল, তা ভুলে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়নি।”

“আমার খাতাটাও নিচে রয়েছে” বলে তিনি পেছনে ফিরে সহযোগীদের তা নিয়ে আসতে চোখ দিয়ে ইশারা করেন।

তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, “এটা কোনো যৌক্তিক অজুহাত হতে পারে না।”

প্রসিকিউটরের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আপনারা রায়ের আগে ক্যামেরার সামনে বলেন, সব অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন। টক শো-তে বলেন, বিচারক ফাঁসি দেবেই,

“তবে এটা ভুলে যাবেন না আপনাদের যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনই প্রমাণ করবে আসামিরা ছাড়া পাবে, নাকি মুক্তি।”

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে বর্ণনা এক হলেও সময়ের ফারাকের বিষয়টি যুক্তি উপস্থাপনের সময় বেরিয়ে এলেও প্রসিকিউটর দাবি করেন, তিনি সন্দেহাতীতভাবে আসামির অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন।

ট্রাইব্যুনালকে তিনি বলেন, “সাক্ষীর স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে একটি ঘটনার সময় দুজন দুই রকম বলেছেন।”

ট্রাইব্যুনোলের তিন বিচারকের একজন শাহিনুর ইসলাম বলেন, “স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে এমন হতে পারে না।”

এসময় আসামি কামারুজ্জামানকে কাঠগড়ায় বসে হাসতে দেখা যায়।

সকালের পর বিকালে দ্বিতীয় দফায় যুক্তি উপস্থাপনের সময় প্রসিকিউটর সাইফুলের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান সরাসরি বলেন, “আমরা আপনার যুক্তি উপস্থাপনে সন্তুষ্ট না। আপনি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে চেষ্টা করবেন। কেস ভালোভাবে ‘প্লেইস’ করবেন এটা আমরা চাই।”

এরপর প্রসিকিউটর তার পক্ষের ১০,১১,১২,১৩ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য তুলে ধরেন।

সাইফুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ হান্নানকে মাথা মুড়িয়ে মুখে চুনকালি দেয়া, বদিউজ্জামান হত্যা এবং সোহাগপুর পল্লীতে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় আসামির জড়িত থাকার বিষয় তুলে ধরে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তিনি।

সাক্ষীদের উদ্ধৃত করে তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নসা, বকা বুড়া ও কাদির ডাক্তার স্থানীয় রাজাকার ছিলেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন কামারুজ্জামান।

“কামারুজ্জামানের নির্দেশে রাজাকাররা ওঠবস করত। তার পরিকল্পনাতেই এই এলাকাতে হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।”

সাক্ষীরা প্রত্যক্ষদর্শী না হলেও কীভাবে কামারুজ্জামানকে সনাক্ত করলেন- সেই প্রশ্ন তুললে প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

তবে যুক্তি উপস্থাপনের শেষ দিকে সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রসিকিউশন ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে।”

এরপর বিকাল সোয়া ৪টায় এ মামলার শুনানি ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করে ট্রাইব্যুনাল।