সোমবার সকালে হরতালের প্রথম দুই ঘণ্টায় রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুর, শ্যমলী ও গাবতলী এলাকায় বিক্ষিপ্ত হাতবোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। পল্লবীর কালসী এলাকায় একটি বাস এবং খিঁলগাও এলাকায় একটি হিউম্যান হলার পুড়িয়ে দিয়েছে পিকেটাররা।
ফায়ার ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন সরকার জানান, বাসে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এছাড়া খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় একটি সংবাদপত্রবাহী হিউম্যান হলারে আগুন দেয় পিকেটাররা। পরে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ধানমন্ডি, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী ও জুরাইন এলাকাতেও সকালে ঝটিকা মিছিল থেকে যানবাহনে ঢিল ছুড়ে ভাংচুরের চেষ্টা চালিয়েছে হরতালকারীরা। বংলাশের নর্থ সাউথ রোডে গলি থেকে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে হরতালকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে বলে ওসি কুদ্দুস ফকির জানান।
এসব ঘটনায় ধানমন্ডিতে আট শিবির কর্মীকে আটক করা হয় বলে ওসি আনোয়ার হোসেন জানান। আর যাত্রাবাড়ীর রায়ের বাগে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সময় একজনকে আটক করা হয় বলে জানান এস আই এমরানুল ইসলাম।
অন্যান্য হরতালের দিনের মতো সোমবারও সকাল থেকে রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। সংখ্যায় কম হলেও গণ পরিবহনও চলছে বিভিন্ন রুটে।
সকালের প্রথমভাগে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে কমলাপুর স্টেশন থেকে যথারীতি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন খান।
সকাল থেকেই বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতে। বিভিন্ন অলিগলিতেও পুলিশের টহল দেখা গেছে। জলকামান ও এপিসি নিয়ে নয়া পল্টরে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে হরতালের শুরুতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভেতরে অবস্থান করছেন শোনা গেলেও সকাল থেকে তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেননি।
তবে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে সকালে কার্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। এ কারণে তারা নিজেদের কার্যালয়ের সামনেও মিছিল করতে পারছেন না।
তারপরও সারা দেশে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এই কার্যালয়ের সামনেই গত ১১ মার্চ বিকালে ১৮ দলের সমাবেশের শেষ দিকে হঠাৎ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।
বিস্ফোরণের পরপরই বিএনপি কর্মীরা পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে এবং সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
এর এক ঘণ্টার মাথায় বিএনপি কার্যালয় থেকে ফখরুল, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দশটি হাতবোমা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
পরদিন ফখরুল খোকা ও আলতাফকে ছেড়ে দেয়া হলেও বাকি নেতাকর্মদের মুক্তির দাবিতে ১৮ ও ১৯ মার্চ দুদিনের এই হরতাল ডাকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
পুলিশ ইতোমধ্যে দ্রুত বিচার ও বিস্ফোরক আইনে দুই মামলায় ১৮ দলীয় জোটের ১৫৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আদালতে তাদের জামিন ও পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বুধবার। তার মধ্যে নেতাকর্মীরা মুক্তি না পেলে বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলায়ও হরতাল ডেকেছে বিএনপি।