মঙ্গলবার রাতে শাহবাগে প্রজন্ম চত্বর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেয়া হয়।
বিবৃতিতে সমাবেশ স্থগিতের কথা জানানোর পাশাপাশি বলা হয়, গণজাগরণ মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার চট্টগ্রাম যাবে।
বুধবার চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে হরতাল ডাকলে পুলিশ মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এরপর মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায়। এরপরই শাহবাগ থেকে গণজাগরণ মঞ্চের বিবৃতি আসে।
এতে বলা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত সহিংসতা এড়াতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
“তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে উল্লেখিত কর্মসূচি অনুষ্ঠিত না হলেও প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিনিধি দল আগামীকাল চট্টগ্রামে গিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারণ, আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে গণজাগরণ মঞ্চ সম্বন্ধে জামাত-শিবির সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করবে।”
চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেয়ার পর হেফাজতে ইসলামও তাদের হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
তার আগে বিকালে বন্দর নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন রূহী গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি প্রতিহত করতে কাফনের কাপড় ও কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণাও দেন হেফাজত নেতারা।
গণজাগরণ মঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়, “তাদের (হেফাজত) এ অবস্থানের সুযোগে জামাত-শিবির চক্র সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশব্যাপী ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।”
“গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ কি প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতাই করছে না,” হরতালকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।
নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা এই অহিংস গণআন্দোলনের সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসকে জড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।”
“অথচ, গণজাগরণের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, তারা আমাদেরকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত করছে। সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলার ধারাবাহিকতায় ৮ মার্চ ঢাকায় নারী জাগরণ সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ করে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।”
মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনেও কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
প্রেসক্লাবের সামনে গণজাগরণ মঞ্চেই বুধবার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। পরে তা অন্য জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামেও গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ।
তবে জামায়াতবিরোধী এই আন্দোলনে ‘অনৈসলামিক’ কর্মকাণ্ড হচ্ছে দাবি করে কয়েকটি ইসলামী দল শাহবাগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়। চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম এর একটি।
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইসলামসহ কোনো ধর্মের অনুভূতির ওপর কোনো ধরনের আঘাত হানার উদ্দেশ্য তাদের নেই। শুধু যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে তাদের।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতাকারী জামায়াত মানুষের ধর্মীয় অনুর্ভতিকে পুঁজি করে গণজাগরণ আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন শাহবাগের তরুণরা।