সবাইকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত তানভীর

পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হল মেধাবী কিশোর নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকি (১৭)।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2013, 10:14 AM
Updated : 8 March 2013, 11:11 AM
দু’দিন নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী সংলগ্ন একটি খালে তানভীরের লাশ পাওয়া যায়। পরে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহসভাপতি রফিউর রাব্বি।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে ত্বকির লাশ নিয়ে কালো পতাকা মিছিল করে সাংস্কৃতিক জোট।এতে অংশ নেন জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কাজী মুকুলসহ অনেকে।

পরে শহরের শায়েস্তা খান এলাকায় তার বাসায় লাশ নেয়া হলে তাকে দেখতে আসেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

বিকালে শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাশ রাখা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এই মেধাবী তরুণকে।

বাদ মাগরিব শহরের আমলাপাড়া জামে মসজিদে নামাযের জানাযা শেষে বন্দরে সিরাজ শাহ্’র আস্তানায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শহরের চাষাঢ়ার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবিসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে এ বছর ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় অংশ নেয় তানভীর। বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়, যাতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় এই কিশোর।

এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, তানভীর একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল বের হয়েছিল। সে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিল, যা দেশে সর্বোচ্চ।

এছাড়া ‘ও’ লেভেল পরীক্ষাতেও সে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানে দেশের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল, বলেন প্রদীপ।

তার বাবা রফিউর রাব্বি সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের শায়েস্তা খান সড়কের পুরাতন কোর্ট রোডের বাসা থেকে বের হয় তানভীর। এরপর আর ফেরেনি।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার সন্ধান না পেয়ে র‌্যাব ও পুলিশকে লিখিতভাবে জানান রাব্বি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিপিবি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নদী পাশের খালে লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি নিজে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে।

তানভীরের ডান চোখে আঘাতের চিহ্ন ও মুখে কালো দাগ ছিল বলে হাফিজুল ইসলাম জানান।

তানভীরের লাশ উদ্ধারের খবর বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

তার চাচা কবি ওয়াহিদ রেজা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ওর তো কোনো শত্রু ছিল না। এ রকম একটা ছেলেকে যারা হত্যা করলো- প্রশাসন যেন তাদের বিচার করে।”

পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে তানভীরকে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।”

তানভীরের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারাও নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন।

তানভীরের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে দুপুরে শহরের চাষাড়া এলাকায় কালো পতাকা হাতে মিছিল করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। 

জোটের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের বাস ভাড়া কমানোর আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাব্বি ছিলেন সোচ্চার।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর যাদের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ এই আন্দোনে শামিল হয়, রফিউর রাব্বি তাদের অন্যতম।

নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে বিভিন্ন সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখেন তিনি।