রাজনীতির ময়লাও সাফ হবে: ইমরান

যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে যে গণজাগরণের সূচনা হয়েছে তাতে দেশের রাজনীতি ‘আবর্জনামুক্ত’ হয়ে প্রগতির পথে এগোবে বলে মনে করেন এর সংগঠকরা।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2013, 00:50 AM
Updated : 7 March 2013, 00:50 AM
গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের জোরালো দাবি এসেছে। তাদের দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন নানা শ্রেণি পেশার লাখো মানুষ।

একমাস ধরে চলে আসা এই আন্দোলনের  নানা দিক নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহবায়ক ইমরান এইচ সরকার।

ব্লগারদের এই সংগঠনটিই প্রথম শাহবাগে দাঁড়িয়েছিল যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি নিয়ে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও রাজপথে নেমে আসার তাড়না বোধ করলেন কেন?

ইমরান: আমরা হঠাৎ করে জড়ো হয়েছিলাম বিষয়টা তেমন না। প্রায় ১০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছি। যুদ্ধাপরাধী ত্রিদিব রায়ের মরদেহ এদেশে আনার উদ্যোগ, তুরস্ক সরকারের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বন্ধের চাপ-এসবের বিরুদ্ধেও আমরা রাজপথে ছিলাম। তখন প্রায় ২০টি ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরেরও বিরোধিতায় আমরা রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। তাই বলা যায়, একেবারে হুটহাট আন্দোলন শুরু করিনি।

শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দিকের কথা বলুন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আমরা আশাবাদী ছিলাম, অপরাধের যথাযথ সাজা পাবে কাদের মোল্লা। কিন্তু যখন ৩৪৪ জন মানুষকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো, তখন প্রতিবাদ না করে বসে থাকতে পারিনি।আমরা অনলাইনে যোগাযোগ করে শাহবাগে একত্রিত হই।

তখন কি ভেবেছিলেন এতোদূর আসতে পারবেন?

আসলে সে সময় আমাদের মানসিক অবস্থাটা এমন ছিলো যে, এতো কিছু ভাবার সুযোগ ছিলো না। আমাদের মনে হয়েছিল বিষয়টির প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ। এতো মানুষকে সাথে পাব এটাও আসলে ভাবিনি।

লাখ লাখ মানুষ আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। কী কারণে এটা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আমার মনে হয়, প্রত্যেকের মধ্যেই চেতনা জীবিত ছিল। প্রয়োজন ছিল একটি প্ল্যাটফর্ম। সবাই সেটার অপেক্ষায় ছিল। এ আন্দোলন তাদের দাঁড়াবার জায়গা করে দিয়েছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার না থাকা।

আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে গত এক মাসে আপনাদের  কোনো ব্যানার বা প্ল্যাটফর্ম কি তৈরি হয়েছে?

আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কমিটি হয়নি। প্রত্যেকটি সংগঠন একত্রিত হয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিই। আর আমাদের ব্যানার হলো গণজাগরণ মঞ্চ।

সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন আন্দোলনের থাকায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এ বিষয়ে কি বলবেন?

আমাদের মূল দাবি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা। এর সঙ্গে যারা একাত্ম হয়েছেন তারাই এখানে এসেছেন।

আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই তরুণ  এবং এরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। তারপরও তারা এতোট সক্রিয় কীভাবে?

গত ১০ বছরে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তাতে তরুণরা দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছে ও সচেতন হয়েছে। তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সচেতনতা।একইভাবে তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্বন্ধেও জানতে পেরেছে। একাত্তরের খুন, ধর্ষণ, লুটপাট সম্পর্কে জেনে তরুণদের মধ্যে তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা তৈরি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ আমরা এখন দেখতে পারছি, এ আন্দোলনের মধ্যে।

ব্লগার রাজীব হায়দারের মৃত্যুর পর তার ব্লগ সম্পর্কে কিছু কথা উঠেছে। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

রাজীব আমাদের একজন সহযোদ্ধা ছিলেন। আন্দোলনের সব কর্মসূচিতে তিনি আমাদের সাথে থেকেছেন। জামায়াত-শিবিরের একটি ব্লগে উস্কানি দেয়ার তিনদিন পরেই তিনি নিহত হন। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের পত্রিকা আমার দেশ তাকে নিয়ে কিছু মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে। তার নামে একটি ভুয়া ব্লগ তৈরি করে তাতে ধর্মবিরোধী কিছু প্রচারণা চালানো হয়। প্রকৃতপক্ষে সেটা একটি ষড়যন্ত্র ছিল, যা এখন প্রমাণিত।

জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জনগণকে কতোটা ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন?

খেয়াল করলে দেখবেন, যখনই যুদ্ধাপরাধী এ দলটির মধ্যে অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয়েছে তখনই তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সম্প্রতি হরতালের নামে সারা দেশে তাদের তাণ্ডব সবাই দেখেছে। কিন্তু মানুষ এখন তাদের রুখে দাঁড়ানোর সাহস করছে। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে। আমাদের এ আন্দোলন যতো ছড়াবে, মানুষ ততোই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমি মনে করি।

আন্দোলনের ভবিষ্যত কী হবে?

সবাই আমাদের ছয় দফা দাবি সম্পর্কে জানেন। এগুলো পূরণ হয়ে গেলে আমরা দেশজুড়ে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনার কথা ভাবছি, যার মূল লক্ষ্য হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। এতে করে আমাদের দেশের রাজনীতি থেকে ময়লাগুলো সব ধুয়ে যাবে।

আপনাদের অহিংস আন্দোলনের পেছনের কারণ কী?

আমরা মনে করি, সমাজে মূল্যবোধ তৈরি করতে গেলে কর্মপন্থা অহিংস হওয়া জরুরি। সহিংসতার চর্চা থেকে জাতির বের হয়ে আসা উচিৎ।

আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচিগুলো কী?

আপাতত ৮ মার্চ পর্যন্ত কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। এরপর আমরা বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করব। তারপর জেলা শহরে যাব। এর পাশাপাশি মূল কেন্দ্র শাহবাগেও নিয়মিতভাবে সমাবেশ চলবে। মূলত এই গণজাগরণের ঢেউ দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।