আব্দুল জলিল মারা গেছেন

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আব্দুল জলিল মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2013, 06:43 AM
Updated : 6 March 2013, 11:09 AM

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জলিলকে। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।  

চিকিৎসকরা আব্দুল জলিলকে ৩০ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন বলে সিঙ্গাপুর থেকে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম। এর আগে তিনবার বাইপাস সার্জারি হয় আবদুল জলিলের।

ইসরাফিল বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় জলিলের মরদেহ দেশে পৌঁছাবে।

বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেদিন মরদেহ রাখা হবে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জলিলের মরদেহ নেয়া হবে। সকাল সোয়া ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা হবে।

এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্পিকার আব্দুল হামিদ। রীতি অনুযায়ী সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে সংসদ মুলতবি করার কথা। তবে অধিবেশনের শেষ কার্যদিবস হওয়ায় তা করা হয়নি।

স্পিকার বলেছেন, পরবর্তী অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাব আনা হবে এবং আলোচনা হবে এর উপর। আলোচনার পরপরই অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হবে।

২০০২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ১৯তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান জলিল। তার আগে আওয়ামী লীগের বিগত সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

আব্দুল জলিল ১৯৪১ সালের ২১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম গ্রহণ করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য।

বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর একটি চিঠিতে দল ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

মুক্তি পাওয়ার পর তাকে আর দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নওগাঁ -৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি জলিলের।

শিক্ষা জীবনের আব্দুল জলিল নওগাঁ কে. ডি. সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখানে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।

এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৩ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য লন্ডনে যান।

তবে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যারিস্টারি পড়া অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসেন জলিল। ১৯৭১ সালে তিনিমুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে উত্তরবঙ্গে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

জলিল ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। নওগাঁ মহিলা কলেজ, ফয়েজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, আবাদ পুকুর কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন শিক্ষা, ক্রীড়া, চিকিৎসা ও সমাজসেবামূলক বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।