‘সাঈদী ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন’

 জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে দেশের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ জালালউদ্দিন আল কাদেরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2013, 03:14 AM
Updated : 7 March 2013, 07:37 AM

তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিভিন্ন সময়ে ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের ভুল ব্যাখা দিয়েছেন।

চট্টগ্রামের ১০ আলেমকে হত্যার ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় তুলে ধরেন মাওলানা জালালউদ্দিন। ওই তালিকায় অধ্যক্ষ জালালউদ্দিনের নাম রয়েছে প্রথমে।

আলেমদের হত্যা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে। সেইসঙ্গে আলেমদের হত্যাচেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ওলামাদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়।

গত সোমবার চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে এই ‘হিটলিস্ট’সহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আট কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

চট্টগ্রামের বিবিরহাটে জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন বলেন, “সাঈদী বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের ইসলামের ভুল ব্যাখা দিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাইন্ডেও যখন তিনি বয়ান দিয়েছেন তিনি মহান আল্লাহ ও রসুলের (সা.) নামে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা আলেম-ওলামারা বিভিন্ন সময় ইসলামের স্বার্থে এসবের প্রতিবাদও করেছি।”

মাওলানা জালালউদ্দিন বলেন, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তারা সাঈদীর সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওই জামায়াত নেতা কখনো কথা বলতে রাজি হননি।

শিবিরের ওই ‘হিটলিস্টের’ অন্য নয় আলেম হলেন- উপাধ্যক্ষ ছগির আহমেদ ওসমানী, শায়খুল হাদীস ওবায়দুল হক নঈমী, মোহাদ্দেস আশরাফুজ্জামান কাদেরী, ফকিহ ওসিউর রহমান, মাওলানা আবুল কাশেম নুরী, ফকিহ আবদুল ওয়াজেদ, মুফতি ইউনূস, মাওলানা তাওহিদ ও পাহাড়তলীর নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন জুবায়ের।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর আট ব্লগারকে হত্যার আরেক পরিকল্পনা উদ্ঘাটিত হয়, যার পেছনেও শিবিরের এক নেতা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে জালালউদ্দিন বলেন, “আমরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। ইসলামের সেবাই আমাদের কাজ। জামায়াতকে আমরা ইসলামী সংগঠন মনে করি না। ইসলামের নামে তারা মানুষকে ভুল বুঝাচ্ছে, বিভ্রান্ত করছে।”

স্বাধীনতাবিরোধী এ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা না করা সরকারের ব্যাপার মন্তব্য করে অধ্যক্ষ বলেন, আইন তার নিজের গতিতে চলবে। সাঈদীর বিচার আইন অনুযায়ী হবে।

“আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কথা ইসলামেও নেই”, বলেন মাওলানা জালালউদ্দিন।

তিনি জানান, সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব এবং চট্টগ্রামের ১০ আলেমকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর মুরাদনগর থেকে বিশ্বরোড হয়ে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রের আমানত। মানুষ যে ধর্মেরই হোক তার জানমালের ওপর আক্রমণ করা যাবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট্র চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ছগীর ওসমানী, মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী, মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান প্রমুখ।