প্রতিবাদে উড়ল পতাকা

দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে লাল-সবুজ পতাকা অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

সুজন মণ্ডলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2013, 06:58 AM
Updated : 2 March 2013, 07:11 AM

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে শনিবার সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

পতাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার শপথও নেন শিক্ষার্থীরা।

শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে পতাকা উত্তোলন করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুরের সময় ছিড়ে ফেলা হয় জাতীয় পতাকা। 

এজন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে ২ মার্চ সারাদেশে একযোগে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর কর্মসূচি দেয় যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চ।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম উত্তোলিত হয় বাংলাদেশের পতাকা।

সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়। পতাকা উত্তোলনের পরপরই ‘জয় বাংলা’, ‘আমার সোনার বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁ ‘ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর।

ইমরান বলেন, “জামায়াত-শিবিরের ‘হায়েনারা’ দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, জাতীয় পতাকা ছিঁড়েছে, তা নজীরবিহীন। এই বাংলায় কোনো রাজাকারকে ঠাঁই দেয়া হবে না।”

গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ আহ্বানকারী ইসলামী দলগুলোর নেতারা জাতীয় পতাকা অবমাননায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে ‘সুযোগ সন্ধানীদের’ দায়ী করেছেন।     

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ক্ষুব্ধ জামায়াত রোব ও সোমবার হরতাল ডেকেছে।

এই হরতাল প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “ইতোপূর্বে বাংলার সাধারণ মানুষ তাদের হরতাল প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের এই হরতালও দেশবাসীকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানাই।”

হরতাল প্রতিরোধে রোববার সকালে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে গণমিছিল বের হবে বলে জানান ইমরান।

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে পতাকা তোলা হয়। পতাকা ওড়ে বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাটে গণজাগরণমঞ্চের আহ্বানের সাড়া দিয়ে বাস, মাইক্রোবাস, মটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে পতাকা উড়তে দেখা যায়।

জেলাগুলোতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পাশাপাশি মিছিল-সমাবেশও হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত গণজাগরণ মঞ্চেও পতাকা উত্তোলন হয়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পতাকা মিছিলও করে।

এদিকে পতাকা উত্তোলনের পর বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের প্রতিবাদে মিছিল বের হয়।

মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ. বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হুসাইন আহমেদ তফসির প্রমুখ।

মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

পতাকা উৎসব

পতাকা ওড়ানোর প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২ ফুট দীর্ঘ পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করেছে জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সকালে শহীদ মিনার থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়ে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয় এবং পরে কলাভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

৪২ ফুট দীর্ঘ জাতীয় পতাকা নিয়ে শহীদ মিনার থেকে জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল।

শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি এম তাজুল ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক অংশ নেন।

শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া সবার পরনে ছিল লাল-সবুজ পোশাক, হাতে ছিল পতাকা।

`আমাদের পতাকা, আমাদের অর্জন` স্লোগানকে ধারণ করে শুক্রবার শুরু হয় দুই দিনব্যাপী জাতীয় পতাকা উৎসব।

শোভাযাত্রার পর সমাবেশে তাজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে যখনি আন্দোলন শুরু হয়েছে তা কখনো বৃথা যায়নি।

“আর নতুন প্রজন্ম শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু করেছে তাও কখনো বৃথা যেতে পারে না। তাদের বিজয় অনিবার্য।”