‘রেললাইন ধরে নাশকতার ছক’

যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের চেষ্টায় মরিয়া জামায়াত সারা দেশে রেলপথজুড়ে নাশকতার চেষ্টা শুরু করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2013, 00:14 AM
Updated : 1 March 2013, 03:54 AM

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ফেনী ও লালমনিরহাটে রেল লাইনে আগুন দেয়া, ফিসপ্লেট ও স্লিপার খুলে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। লাইনচ্যুত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘনার মুখে পড়েছে আন্তনগর ট্রেন মহানগর গোধূলী।

এসব ঘটনার পেছনে জামায়াতে ইসলামীর জড়িত থাকার কথা বলেছেন, পুলিশ ও রেল কর্মকর্তারা।     

রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকও বলছেন, যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায় না এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে, তারাই এ নাশকতা চালাচ্ছে।

এ ধরনের নাশকতা ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফেইসবুকে জামায়াত-শিবিরপন্থীদের পেইজ হিসাবে পরিচিত ‘বাঁশের কেল্লা’য় রেললাইন তুলে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।   

লাইনচ্যুত মহানগর গোধূলী

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে গণজাগরণের মধ্যে আদালতের এই রায় হয়।

রায়ের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা শুরু করে জামায়াত শিবির কর্মীরা। সংঘর্ষে পুলিশসহ বহু লোক হতাহত হয়। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতেও হামলা চলে।  

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেইসবুকে বাঁশের কেল্লা নামের ওই পেইজের মাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে, যাতে বিভিন্নভাবে নাশকতা সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়।

‘কিছু করণীয় বিষয়’ শিরোনামের ওই পোস্টের ১০টি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটিই ছিল- “এই মুহূর্তে সকল রেল লাইন উপড়ে ফেলে দিতে হবে।”  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টেশন থেকে এক দেড় কিলোমিটার সামনে কে বা কারা রেল লাইনে আগুন জ্বালিয়ে রাখে।

লাইনে আগুন দেখে বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেন মহানগর গোধূলী কুমিরা স্টেশনে থামিয়ে রাখা হয়। লাইন পরিষ্কার করে বিকাল ৫টায় ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়।

কিন্তু ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর গোধূলী রাতে ঠিকই নাশকতার শিকার হয়।   

ফেনী রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জানান, ‘দুস্কৃতিরা’ রেল লাইনের ফিসপ্লেটের ক্লিপ খুলে ফেলায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফেনী রেল স্টেশনের কাছে খাজুরিয়া এলাকায় মহানগর গোধূলীর ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে তখন থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও মধ্য রাতে মাঝপথে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

চট্টগ্রাম ও লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বগি সরিয়ে লাইন মেরামত করার পর শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-চট্টগ্রাম লাইনে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়।

এছাড়া লালমনিরহাটের আদিতমারীতেও বৃহস্পতিবার রাতে রেল লাইনের একটি স্লিপার উপড়ে ফেলা হয়। রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত লাইন মেরামত করায় বড় কেনো বিপদ ঘটেনি বলে স্টেশন মাস্টার মজিবর রহমান জানান। 

রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলপথের যেসব স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চলানো হচ্ছে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে রেল পুলিশ ও আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।”

নাশকতা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, “ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও রেলপথে নাশকতা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হবে।”

ঢাকা-চট্রগ্রাম লাইনসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রেলপথে বৃহস্পতিবার থেকে নাশকতার যেসব ঘটনা ঘটেছে- তার পেছনে জামায়াতের দিকেই আঙুল তুলেছেন এই মন্ত্রী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায় না এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী তারাই এ নাশকতা চালাচ্ছে।”

বাঁশের কেল্লার সেই পোস্টে আরো বিভিন্নভাবে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

এতে লেখা হয়েছে, ‘সকল লঞ্চ টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালকে বিকল করতে হবে। ঢাকাকে সকল জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। প্রতিটি থানা ঘেরাও করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে সাঈদী সম্পর্কে বোঝাতে হবে। দালাল মিডিয়াগুলোতে হামলা করতে হবে। পুলিশের গুলির দৃশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল দূতাবাস ঘেরাও করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা অবরোধ করতে হবে। প্রত্যেক মন্ত্রী এমপির বাড়ি পুড়িয়ে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক শহীদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের নাশকতার চেষ্টা মেকাবেলায় প্রস্তুত।

“আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে এই নৈরাজ্যে প্রতিরোধে কাজ করছি। সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করছি।”