‘সহিংসতা জামায়াতের নেতৃত্বে’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুমার নামাজের পর শহীদ মিনার ও গণজাগরণ মঞ্চে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষ ঘটনা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2013, 08:17 AM
Updated : 22 Feb 2013, 08:31 AM

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সার্ক কালচারাল সোসাইটি আয়োজিত জাতীয় মাতৃভাষা উৎসব অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার যে মৌলবাদী শক্তির উত্থানের প্রতিফলন দেখা গেছে, তা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে হয়েছে।”

এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, মূলত বাহান্ন ও একাত্তরে যারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের পথে বাধা তৈরি করেছিল তাদের উত্তরসূরিরাই দেশব্যাপী জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মুষ্ঠিমেয় স্বার্থান্বেষী কয়েকটি উগ্রবাদী সংগঠন জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। মসজিদকে তারা কুক্ষিগত করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্ম পালন করতে বাধা দিচ্ছে। বাংলাদেশকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

জুমার নামাজের পর সিলেটে শহীদ মিনারে হামলা

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের ডাকে টানা আন্দোলনে সাড়া দিয়ে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে প্রসিকিউশনের আপিলের সুযোগ তৈরি করে। একইসঙ্গে একাত্তরে মানবতাবিরাধী কর্মকাণ্ডের জন্য দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীরও বিচারের পথ তৈরি হয়।  

এই আন্দোলনের মধ্যেই রাজধানীতে খুন হন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, যিনি অনলাইনে লেখালেখির মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের স্বরূপ উন্মোচনে সক্রিয় ছিলেন।

রাজীব খুন হওয়ার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারণা চালানো হয়, তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতেন। এর সূত্র ধরে ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ ব্লগারদের শাস্তি এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘ষড়যন্ত্রে’র প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে সারাদেশে জুমার পর বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয়া হয়।

শুক্রবার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও কাঁটাবন, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় মিছিলকারীরা। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় হামলা ও ভাংচুর করা হয় স্থানীয় সংহতি মঞ্চ। সিলেট ও ফেনীতে শহীদ মিনারে আগুন দেয় মিছিলকারীরা।

সহিংসতায় সিলেট ও ঝিনাইদহে একজন এবং গাইবান্ধায় দুইজন নিহত হন।

পুলিশও বলছে, ইসলামী ১২ দলের কর্মসূচিকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা এই সহিংসতা চালিয়েছে বলে তাদের ধারণা। 

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের নেতাদের মসজিদের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের প্রতিশ্রুতিতে তাদের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়।

“কিন্তু তাদের মিছিল নির্ধারিত এলাকা পেরিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে যায় এবং ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এ কারণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়েছে।”

গত তিন মাস ধরে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালিয়ে আসা জামায়াত কর্মীরা অন্য ইসলামী সংগঠনের কর্মসূচিকে ব্যবহার করে সংঘাতে জড়াচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,    “আমার কাছে তেমনই মনে হচ্ছে। বিষয়টি আমার খতিয়ে দেখব।”

জামায়াতে ইসলামীই এ সহিংসতা চালিয়েছে বলে মনে করছে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চও। এর পিছনে উস্কানিদাতা হিসেবে আমার দেশ পত্রিকাকে চিহ্নিত করে এর সম্পাদককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে তারা।

চট্টগ্রামে জাগরণ মঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে মিছিলকারীরা।

এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে বলেন, “আজকের হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।”

সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ- সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের ওপর যারা আক্রমণ করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই সহিংসতার জন্য জামায়াত ইসলামী ও ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ধর্ম নিয়ে ‘অপপ্রচার’ ও সে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জড়িত বলে মনে করেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি ‘আমার দেশ’ পত্রিকা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার দেশ’ ধর্মীয় উস্কানিমূলক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে। এটি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা দরকার।