একই সঙ্গে সহিংসতার পেছনে আমার দেশ পত্রিকাকে চিহ্নিত করে এর সম্পাদককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাগরণ মঞ্চ থেকে বলেন, “আজকের হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।”
একইসঙ্গে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন স্থানে হামলা-সহিংসতার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭টায় সারা দেশে সব পাড়ায় মহল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করার আহ্বান জানান ইমরান।
তিনি বলেন, “এখন থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টাই রাজপথে থাকব।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় শাহবাগের জাগরণ।
এর একাদশ দিনে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে খুন হন স্থপতি রাজীব। নিজের বাসার সামনে এই ব্লগারকে জবাই করে হত্যা করা হয়।
রাজীব নিয়মিতভাবে ব্লগে লিখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে। লেখনীর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের স্বরূপ উন্মোচনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
রাজীব খুন হওয়ার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারণা চালানো হয়, তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতেন। শুক্রবারও আমার দেশের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়- ‘ধর্ম ও আদালতের অবমাননা করছে ব্লগারচক্র’।
এর আগেও শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এ পত্রিকায়, যা বানোয়াট বলে দাবি করে আসছে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করে ‘যুদ্ধাপরাধের যুক্ত দল’ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের জন্য ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। একইসঙ্গে টানা কর্মসুচি থেকে সরে এসে শুক্রবার সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা ও দোয়া এবং স্বাক্ষর সংগ্রহসহ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি দেয় তারা।
অন্যদিকে ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ ব্লগারদের শাস্তি এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘ষড়যন্ত্রে’র প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে সারাদেশে জুমার পর বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয়া হয়।
শুক্রবার নামাজের পর এসব সংগঠনের মিছিল থেকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও কাঁটাবন, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। হামলা-সংঘর্ষ হয় চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে হামলা ও ভাংচুর করা হয় স্থানীয় সংহতি মঞ্চ। সিলেটের শহীদ মিনারে আগুন দেয় মিছিলকারীরা।
পুলিশ বলছে, ইসলামী ১২ দলের কর্মসূচিকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা এই সহিংসতা চালিয়ে থাকতে পারে।
দুপুরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা শুরু হলে অনলাইন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলসহ ফেইসবুক ও ব্লগে সেই খবর পেয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আবার শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। গণজাগরণ চত্বরের মূলমঞ্চ থেকে দেয়া আগের স্লোগানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় “শহীদ মিনারে হামলা কেন? জামাত শিবির জবাব চাই”।
ঘটনাস্থলে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চিন্তামন তুষার বলেন, ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রায় হাজার খানেক জনতা সেখানে জড়ো হন।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ চৌরাস্তায় যান চলাচল আবারো বন্ধ করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের একদল শিক্ষার্থী।
পৌনে ৬টার দিকে ব্লগার ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শাহবাগ মোড়ে চলে আসেন শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
সন্ধ্যার মধ্যে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে থেকে পাবলিক লাইব্রেরি পর্ন্ত রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। রাস্তায় লাল রং দিয়ে লেখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র নূর বাহাদুর বলেন, “আমরা এইখানে শপথ নিয়েছি, রাজাকারদের ফাঁসি এবং জামায়াতের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না।”