পল্টন-কাঁটাবন রণক্ষেত্র

জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও কাঁটাবন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠনের কর্মীরা। হামলা হয়েছে সংবাদ কর্মীদের ওপরও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2013, 01:55 AM
Updated : 22 Feb 2013, 02:39 AM

পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও। 

পল্টন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি কামাল তালুকদার জানান, দুপুর পৌনে ১টার উত্তর গেইটের দিকে মসজিদের ভেতর থেকে রাস্তায় অবস্থান নেয়া পুলিশের দিকে ঢিল ছোড়া হয়।

এ সময় মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল্লাহ তুহিন ও এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান ইমরান তুহিন ছবি তুলতে তুলতে মসজিদের দিকে এগোলে কয়েকজন তাদের মারধর করে।

পরে জুমার নামাজ শেষে ইসলামী সংগঠনগুলোর কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের দিকে এগোনোর সময় তোপখানা রোডে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ের সামনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৈরি তোরণ ভাংচুর করে।

এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালালে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। অন্যদিকে হামলাকারীরা বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরণেরও শব্দ পাওয়া যায়।

সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ শটগানের ছররা গুলি ব্যবহার করে। এ সময় দুই সাংবাদিক, দুই পুলিশসহ অন্তত সাতজন আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। 

এদের মধ্যে একাত্তর টিভির ক্যামেরাম্যান আরিফুজ্জামান পিয়াস, গাজীটিভির মাসুদুর রহমান এবং আরিফুর রহমান হীরা, আল-আমিন ও হাসান নামের পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হয়েছে।

নামাজের পর কাঁটাবন মসজিদ থেকেও ইসলামী সংগঠনগুলোর কর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ঢিল ছুঁড়তে শুরু করে তারা। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় লালবাগ পুলিশের সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) রেজাউল করিম আহত হন বলে একজন পুলিশ কনস্টেবল জানান।   

সংঘর্ষের পর কাঁটাবন মসজিদ এলাকা থেকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে যাওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাস থেকে দুজনসহ মোট চারজনকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা শুক্রবার সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা ও দোয়ার কর্মসূচি দেয়ার পর ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ ব্লগারদের শাস্তি এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘ষড়যন্ত্রে’র প্রতিবাদে কয়েকটি ইসলামপন্থী দলের ব্যানারেও সারাদেশে জুমার পর বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয়া হয়।

ইসলামী ও সমমনা ১২ দল,চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠন আলাদা বিবৃতিতে এই কর্মসূচি দেয়।

যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বাহিনীকে একটি গোয়েন্দা বার্তা পাঠানো হয়, যাতে শাহবাগ, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আত্মঘাতী হামলার মতো নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, “আমাদের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, রাষ্ট্রবিরোধী চক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক করে তুলতে আত্মঘাতী হামলাসহ বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে।”

২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই শঙ্কা থাকার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয় ওই বার্তায়।