চট্টগ্রামে রাজিবের গায়েবানা জানাযায় হাজারো মানুষ

হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে গণ আন্দোলনের প্রথম ‘শহীদ’ উল্লেখ করে চট্টগ্রামে তার গায়েবানা জানাযায় অংশ নিয়েছে হাজারো মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2013, 06:56 AM
Updated : 16 Feb 2013, 06:57 AM

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে টানা ১২ দিনের মতো চলা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অনুষ্ঠিত হয় রাজীব হায়দারের গায়েবানা জানাযা।

বিকাল তিনটায় যথারীতি শুরু হয় এ কমসূচি। কিন্তু শনিবারের এ আন্দোলনের পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের ‘প্রজন্ম চত্বরে’ চলমান গণআন্দোলনের কর্মী ব্লগার রাজীবের খুন হওয়ার ঘটনায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে সাধারণ মানুষ চট্টগ্রামের এ আন্দোলনে শরিক হন।

মিরপুরের পলাশ নগরের নিজ বাসার সামনেই শুক্রবার রাতে খুন হন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী রাজীব। জামায়াত-শিবির তাকে হত্যা করেছে বলে তার সহযোদ্ধা ও স্বজনরা জানিয়েছেন।

নগরীর চেরাগীর পাহাড় থেকে জামালখান মোড় পর্যন্ত অংশ নেয়া আন্দোলনকারীরা কালোব্যাজ ধারণ করে এ হত্যার প্রতিবাদ জানান।

চট্টগ্রামের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ থেকে রাজীব হায়দারের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। রাজীব এ আন্দোলনের সাহস ও প্রেরণা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন জানাযায় শরিক হওয়া সর্বস্তরের মানুষেরা।

নগরীর জামালখান ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ জানাযা পড়ান মাওলানা নূর হোসেন। এসময় জামাল খান মোড় থেকে চেরাগী পাহাড় পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সারিবদ্ধ ভাবে জানাযায় শরিক হন।

জানাযার পর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাজীবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে রাজীব হত্যার প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা রাস্তায় বসে পড়েন।

রাস্তায় সমবেত কণ্ঠে স্লোগান তুলতে থাকেন- ‘শহীদ রাজীব লও সালাম’, রাজীব মোদের শিখিয়ে গেছে, লড়াই করে বাঁচতে হবে’, ‘আমরা আছি থাকব, রাজীব হত্যার বদলা নিব’, ‘আমরা যখন স্লোগান তুলি, জামাত তখন মানুষ মারে।’

কালোব্যাজ ধারণ ছাড়াও সমাবেশ স্থলের মূল মঞ্চে জাতীয় পতাকার পাশে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং রাজীবের ছবি সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন লাগানো হয়।

এদিকে, শনিবার মঞ্চে ‘মুক্তিযোদ্ধার আক্রোশ’ শিরোনামে একটি ভাষ্কর্য তৈরি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষকÑশিক্ষার্থীরা।

ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সৌমেন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণ জাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত দশ দিন ধরে আমরা বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে আসছি।আগে প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হলেও আজ আমরা এ ভাষ্কর্যটিএনেছি।”

তিনি আরো বলেন, “ভাষ্কর্যটিতে একদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারের দিকে রাইফেল তাক করে ঘৃণা প্রকাশ করছে। অন্যদিকে অপর এক মুক্তিযোদ্ধা কাঁধে রাইফেল আর অন্য হাতে বিজয়ের শান্তির পায়রা উড়াচ্ছে।”

চট্টগ্রামের গণজাগরণ মঞ্চে প্রতিদিন মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে হাজির হন রাশা মুনতাকা নামে হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের এক শিক্ষার্থী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কখনও ভাবিনি রাস্তায় এসে মিছিলে যোগ দিয়ে স্লোগান দেব। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় এসে সকলের সাথে স্লোগানে কণ্ঠ মেলাচ্ছি।

“আমরা যখন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি তখন এ স্বাধীনতা বিরোধীরা আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা রাজীব ভাইকে খুন করেছে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া অন্যদের সাথে রাজপথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এ শিক্ষার্থী।