শাহবাগের পাশে দাঁড়ান : হাসিনা

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ ঘটানো তরুণদের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2013, 03:54 AM
Updated : 16 Feb 2013, 06:24 AM

হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার পর শনিবার তিনি এ আহ্বান জানান।

মিরপুরের পলাশ নগরে নিজের বাড়ির সামনে শুক্রবার রাতে খুন হন শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী রাজীব। জামায়াত-শিবির তাকে হত্যা করেছে বলে তার সহযোদ্ধা ও স্বজনরা দাবি করছে।

প্রধানমন্ত্রী বিকালে রাজীবের বাসায় যান। সেখানে তার বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

বিকালে পৌনে ৪টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত ওই বাসায় ছিলেন শেখ হাসিনা। বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

রাজীবকে শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, শাহবাগের এই তরুণ প্রজন্ম নবজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অনেকদিন ধরেই এরকম একটা খারাপ খবরের আশঙ্কা করছিলাম। তা-ই ঘটে গেল।”

“শাহবাগের নিরাপত্তায় যত রকম ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তা নিয়েছিলাম। তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের পর পুরো জাতির উন্মেষ ঘটাতে পেরেছে। তারা যখন চেতনার উন্মেষ ঘটাল তখনি এই ঘটনা ঘটানো হল।”

“সকলেই ধরে নিতে পারেন কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে,” বলেন তিনি।।

খুনিদের বিচারের আওতায় আনার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে এতটুকু কথা দিতে পারি, এদের আমরা ছাড়ব না।”

“তরুণ প্রজম্নের যে দাবি তাদের সঙ্গে সংসদ থেকে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছি। তাদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পরাজিত শক্তির হাত থেকে রক্ষা করব।”

এজন্য জনগণের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “পরাজিত শক্তি রাজাকার, আল বদর, জামায়াত, শিবিরের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। এ জন্য তরুণদের পাশে সবাইকে আমি দাঁড়াতে বলব।”

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এদেরকে অনেকে গণতান্ত্রিক শক্তি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করে। আজকে এটা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। জামাত-শিবিরের রাজনীতি হচ্ছে সন্ত্রাসের রাজনীতি।

“এ সন্ত্রাসীদের যা করার আমরা তা করব। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই, কোনো অধিকার নেই।”

শাহবাগের আন্দোলন থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।

সরকারি দলের নেতারাও এর পক্ষে কথা বলছেন। পাটমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধে শিগগিরই সংসদে বিল উঠবে।

প্রধানমন্ত্রী রাজীবের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও আসলামুল হক।

সকালে রাজীবের বাসায় যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন।

স্থপতি রাজীব ও তার ভাই পলাশনগরের ওই বাসায় থাকতেন। তার বাবা ও মা থাকেন গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তবে হত্যাকাণ্ডের পর তারা পলাশ নগরের ওই বাসায় এসেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীবের বাবা-মাকে সান্ত্বনা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত যেন হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

“এর জন্য যারা দায়ী, তাদের সনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে,” বলেন তিনি।

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার

রাজীব হত্যাকাণ্ড তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।

রাজীব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মিরপুরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে। অবরোধ হয়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়ায়ও।

সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা এই জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন, ওই এলাকাটিতে এই দলটির গোপন আস্তানা রয়েছে।

তিনি জানান, রাজীব যে স্থানটিতে খুন হন, সেখানে ল্যাম্পপোস্টে বাতি ছিল না। ফলে খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবকে কোপানোর পর গলাকেটে হত্যা করা হয়।

রাজীবের বাবা মুক্তিযোদ্ধা নাজিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু রাজাকাররা নিশ্চিহ্ন না হওয়ায় আজ আমার ছেলেকে হারাতে হয়েছে।”

“আমি রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই,” বলেন তিনি।

রাজীবের মা গাজীপুরের মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তার নানা ছিলেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তবে রাজীবরা দুই ভাই কোনো দলে যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন রাজীবের মেজ মামা খুররম হায়দার।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণমঞ্চ থেকে রাজীব হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার কালোব্যাজ ধারণ করছেন আন্দোলনকারীরা। বিকালে শাহবাগেই রাজীবের জানাজা হবে।