মন ছুটে যায় ‘শাহবাগে’: হাসিনা

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়ের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদের দাবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2013, 08:21 AM
Updated : 10 Feb 2013, 12:57 PM

তবে রায় আদালতের বিষয় বলে এক্ষেত্রে সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা ফুটে উঠেছে তার কথায়।

এরপরও তিনি বলেছেন, “বিচারের রায় দেবে ট্রাইব্যুনাল, আইন দেখে তারা চলবে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা যেন বিবেচনায় নেয়, সেই আহ্বান জানাব।”

শাহবাগের আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন রোববার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার শুরুতেই কয়েকজন সংসদ সদস্য শাহবাগের আন্দোলনে সমর্থনের প্রস্তাব তোলেন।

এরপর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আবেগময় এক বক্তৃতায় দেশজুড়ে চলমান এক আন্দোলনে তার একাত্মতা প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বক্তৃতার শুরুতেই একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংসতার কথা তুলে ধরেন।

তিনি তুলে ধরেন স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর প্রক্রিয়া এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তা কীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।

তিন যুগ পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর উদ্যোগ পুনরায় নেয়ার কথা জানিয়ে এই বিচার শেষ করতে নিজের অটল অবস্থানও প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে একদল তরুণ।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বক্তৃতায় শাহবাগের আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানান তিনি।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বিক্ষোভ পরিণত হয় হাজারো মানুষের সমাবেশে। গত শুক্রবার তা লাখো মানুষ শপথ নেয় ওই সমাবেশে।

শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের শপথের প্রতিটি বাক্য শুনেছি। তাদের প্রতিটি বাক্য যুক্তিযুক্ত। তাদের এই শপথ বাস্তবায়নে যা যা করার দরকার করব।”

আন্দোলনকারীরা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করাসহ ছয়টি দাবি তুলেছে, এই দাবিতে স্পিকারের কাছে রোববার বিকালেই স্মারকলিপি দেয় তারা।

ওই স্মারকলিপি স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতেও যায় এবং তা পড়ার পরই বক্তব্য দিতে দাঁড়ান তিনি।

“মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেভাবে জেগে উঠেছে, তাদের আমি এই সংসদের মাধ্যমে সুভাশীষ জানাই, প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।”

শাহবাগের প্রেরণায় সারাদেশে আন্দোলনের বিস্তারকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছে। অদ্ভুত জাগরণ ঘটিয়েছে। প্রতিটি গ্রামে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

“আমি যখন দেখি তরুণ প্রজন্ম কীভাবে জেগে উঠেছে, আমারো মন ‍ছুটে যায়।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে এই গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু, মাঝে ছেদ এবং পুনরায় শুরুর কথা তরুণদের কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“যে বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলন- তা বন্ধ হয় জাতির পিতাকে হত্যার পর। পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে অনেকে চলে গিয়েছিলেন। যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল, তাদের এদেশে নিয়ে এসে সব অধিকার দেয়া হয়।”

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা ধরা গলায় ছোট ভাই শেখ রাসেলকে হত্যার কথা তুলে ধরেন।

দুই ভ্রাতৃবধূ হত্যাকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের মেহেদির রঙ রক্তের সঙ্গে মুছে গিয়েছিল।

“৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধ থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধ হয়ে যায় গণ্ডগোল। পাক হানাদার বাহিনী বলা যাবে না! হানাদার বাহিনী বলতে হবে।”

“৮১ সালে দেশে ফিরে এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তাও হাল ছাড়িনি,” বলেন শেখ হাসিনা।

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের সঙ্গে সাক্ষাতে একাত্তরে পাক বাহিনীর বর্বরতার কথাও জানানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা।

“তাকে বলেছিলাম, আমরা ক্ষমা করতে পারি। কিন্তু, আমরা ভুলব না। জাতিসংঘে দেখা হয়েছিল। তাকে আমি এই কথা বলেছিলাম।”

বিচার পুনরায় শুরুর উদ্যোগ নেয়ায় কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যে আইন জাতির পিতা করেছিলেন, যে আইন জিয়াউর রহমান সামরিক অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল করেছিল, আমরা তা ২০১০ সালে পাস করি।”

“জীবন দিয়ে হলেও বিচার কাজ চালিয়ে যাব। বিচারের রায় বাস্তবায়নে সবার সহায়তা চাই।”

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামী নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আইনগত দুর্বলতা থাকলে তা ঠিক করা হবে বলে তরুণদের আশ্বাস দেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যেতে তরুণদের পরামর্শ দেন তিনি।

আন্দোলনকারীরা শাহবাগকে ‘প্রজন্ম চত্বর’ নাম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও শাহবাগের নতুন নাম দেয়ার কথা বলেন।

“শাহবাগ নামটার মধ্যে পাকিস্তান-পাকিস্তান গন্ধ। শাহবাগ হোটেল ছিল বলেই এই নাম হয়েছিল। এখন তো শাহবাগ হোটেল নেই।”

তিনি ওই স্থানটির নাম ‘তরুণ প্রজন্ম স্কোয়ার’ দেয়ার কথা বলেন।

গণজাগরণ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই দেশে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের ঠাঁই হবে না- এই বিশ্বাস আমার মধ্যে জেগেছে।

“বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে। এখন আমি স্বস্তিতে মরতে পারব, শান্তিতে মরতে পারব।”