তবুও ‘নির্বিকার’ গোলাম আযম

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ যখন উত্তাল, পাশের শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজন সেলে বন্দি গোলাম আযম তখন অনেকটাই ‘নির্লিপ্ত’।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2013, 09:42 AM
Updated : 8 Feb 2013, 12:31 PM

মহাসমাবেশের লাখো কণ্ঠে “গ তে গোলাম আযম, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই” স্লোগান প্রিজন সেলেও পৌঁছার কথা। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসমাবেশের প্রতিক্রিয়ায় তার (গোলাম আজম) মধ্যে অস্থিরতা, অস্বাভাবিকতা, দুশ্চিন্তা বা চিন্তক্লিষ্টতা বা এ ধরনের কিছু নাই। সে স্বাভাবিক। সে সুস্থ আছে, খাওয়া খাচ্ছে ঠিকভাবে।”

“প্রত্যেকদিনই সেখানে কর্তব্যরত নার্স ও ডাক্তাররা আমাকে সকালে ফিডব্যাক দেয়। আজকেও আমি ফিডব্যাক পেয়েছি। তার ভিতরে কোনো ধরনের পরিবর্তন নাই।”

ওদিকে শাহবাগের অভূতপূর্ব মহাসমাবেশে একাত্তরের হত্যাকারী আর ধর্ষকদের ফাঁসি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন লাখো জনতা।

শপথে বলা হয়, “একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার, আল বদর, গণহত্যা ও ধর্ষণকারীদের ‍মৃত্যুদণ্ড না হওয়া পর্যন্ত এই গণমানুষের মঞ্চ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

গত ১২ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ৫২ দফা অভিযোগ উত্থাপন করে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তা পুনর্বিন্যস্ত করে ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার তীব্র বিরোধিতাকারী গোলাম আযম ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন, যাদের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।

তার বিরুদ্ধে একাত্তরে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭১ থেকে ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা। ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশে ফেরার পর দীর্ঘদিন তার নাগরিকত্ব না থাকলেও বিগত বিএনপি সরকারের সময় উচ্চ আদালতের আদেশে নাগরিকত্ব ফিরে পান গোলাম আযম।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই দেয়া আদেশে তাকে ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। হাজির হয়ে তিনি জামিন আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ৯০ বছর বয়সী জামায়াতের এই নেতাকে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে।