স্কুলের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ে এই শিশুদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে দেশকে জানার আগ্রহ। আর টেলিভিশনে গত কয়েকদিন ধরে এই গণজমায়েতের খবর তাদের টেনে এনেছে শাহবাগে।
শুক্রবার ছুটির দিনে অনেক বাবা-মাই তাদের সন্তানকে শাহবাগের জনসমুদ্রে যোগ দিয়েছেন বাঙালি জাতির গর্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে।
সকাল থেকেই রাজধানী এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকঢোল নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। দুপুরেই জমায়েতের চৌহদ্দী ছাড়িয়ে গেছে কাঁটাবন থেকে শিশুপার্ক, বিএসএমএমইউ থেকে চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শায়ান বলে, “টেলিভিশনে দেখলাম সবাই এখানে বিক্ষোভ করে। খালাতো ভাইকে নিয়ে চলে আসছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব।”
এখানে কেন এসেছ- এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে, “সবাই রাজাকারদের শাস্তি চায়। এটা দেখে আমারো ইচ্ছা করল, তাই আসলাম।”
যুদ্ধাপরাধীদের কথা কার কাছে শুনেছে জানতে চাইলে শায়ানের জবাব, “স্কুলের সমাজ বইয়ে পড়েছি মুক্তিযুদ্ধের কথা, রাজাকারদের কথাও পড়েছি। ওরা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ওপরে হামলা করেছে, হত্যা করেছে। আমিও রাজাকারের ফাঁসি চাই।”
শায়ানের সঙ্গে এসেছে তার খালাতো ভাই সারুলিয়া আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইম। তার গালে দেখা গেল জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ আল্পনা।
কেরানীগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ী বাবা আক্কাসের সঙ্গে শাহবাগে এসেছে সাব্বির আহমেদ জয়। কেম্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নার্সারির শ্রেণির ছাত্র সে। তার মাথায় বাঁধা কাপড়ে লেখা ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আক্কাস বলেন, “গতকাল থেকে টেলিভিশনে বিক্ষোভের খবর দেখে বাচ্চারাও এখানে আসতে চায়। আমিও আপত্তি করিনি। দেশের ইতিহাস তাদেরও জানা উচিত।”
মো. মহসীন বলেন, “মেয়েকে দেখাতে এসেছি যে আমরা বীরের জাত। এখানে এসে ওর মধ্যে দেশের সম্বন্ধে জানার আকুতি তৈরি হবে। বড় হয়ে এরাই তো দেশের হাল ধরবে।”
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ মোড়ে এই বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক। এরপর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সকাল-দুপুর-রাত বিরামহীন চলছে এই অবস্থান।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে যোগ দিয়েছে শাহবাগের কর্মসূচিতে। তাদের প্রায় সবার মাথা আর হাতে লাল-সবুজ পতাকা। আর মুখে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি।